প্রত্যেকের জন্য পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো। তিনি বলেছেন, অন্য কোনও দেশ যদি রাশিয়া-বেলারুশ ইউনিয়নে যোগ দেয় তবে তাদের ‘সবার জন্য পারমাণবিক অস্ত্র’ থাকতে পারে।

বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনে বেলারুশ-রাশিয়ার চুক্তির কয়েকদিনের মাথায় লুকাশেঙ্কো এই মন্তব্য করলেন। সোমবার (২৯ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান চলছে ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে। রুশ এই আগ্রাসনের শুরু থেকেই রাশিয়ার পাশে রয়েছে প্রতিবেশী বেলারুশ। আর এরই জেরে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামাসহ বিভিন্ন সময়ই নানা ধরনের হুমকি দিয়ে এসেছে দেশটি।

এই পরিস্থিতিতে গত মার্চ মাসের শেষের দিকে বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আর এরপর রাশিয়া গত সপ্তাহে বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের পরিকল্পনা আরও এগিয়ে নিয়েছে।

আর এর মাধ্যমে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন করতে চলেছে রাশিয়া। যা মূলত পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রয়টার্স বলছে, রোববার গভীর রাতে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। সেখানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ এই মিত্র বলেন, এটি অবশ্যই ‘কৌশলগতভাবে বোঝা উচিত’ যে, মিনস্ক ও মস্কোর একত্রিত হওয়ার অনন্য সুযোগ রয়েছে।

লুকাশেঙ্কো বলেন, ‘রাশিয়ান ফেডারেশনের সাথে আমাদের যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, এমন সম্পর্ক কাজাখস্তান এবং অন্যান্য দেশ রাখতে চাইলে কেউ বিরোধিতা করবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি কেউ চিন্তিত হয় ... (তাহলে) এটি খুব সহজ: বেলারুশ ও রাশিয়ার ইউনিয়ন স্টেটে যোগদান করুন। তাহলেই হবে: সবার জন্য পারমাণবিক অস্ত্র থাকবে।’

অবশ্য লুকাশেঙ্কো বলেছেন, এটি কেবল তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি, রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি নয়।

রয়টার্স বলছে, রাশিয়া এবং বেলারুশ আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ইউনিয়ন স্টেটের অংশ। এটি মূলত সীমান্তহীন ইউনিয়ন এবং সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের এই দুই দেশের মধ্যে একটি জোট হিসেবে কাজ করে।

মূলত বেলারুশ হচ্ছে ইউক্রেন সীমান্তবর্তী রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ একটি মিত্র দেশ। বেলারুশিয়ান সরকার ক্রেমলিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের কট্টর সমর্থক। এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে বছরজুড়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সমর্থন করেছেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো।

রাশিয়া গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিবেশী ইউক্রেনে আক্রমণের সময় বেলারুশের ভূখণ্ডকে লঞ্চপ্যাড হিসাবে ব্যবহার করেছিল এবং এরপর থেকে বেলারুশিয়ান ভূখণ্ডে যৌথ প্রশিক্ষণ মহড়ার পাশাপাশি মস্কোর সাথে দেশটির সামরিক সহযোগিতা আরও জোরালো হয়েছে।

রোববার বেলারুশিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, রাশিয়ার তৈরি এস-৪০০ ভ্রাম্যমাণ সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল সিস্টেমের আরেকটি ইউনিট মস্কো থেকে এসে পৌঁছেছে। এই সিস্টেমগুলো শিগগিরই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হবে।

উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো ইউরোপের দীর্ঘতম শাসক। গত ২৮ বছর ধরে তিনি বেলারুশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বেলারুশিয়ান এই প্রেসিডেন্ট রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমর্থন তাকে ২০২০ সালে গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভের পরও টিকে থাকতে সাহায্য করেছিল।

এছাড়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধে সমর্থনের জন্য সাবেক এই সোভিয়েত রাষ্ট্রের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশ বিলিয়ন ডলার মূল্যের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

টিএম