রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া গুরুতর কোনও আহতের ঘটনা ঘটেনি বলেও দাবি করা হয়েছে। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে দফায় দফায় বড় ধরনের বিমান ও ড্রোন হামলার মধ্যে মস্কোতে এই হামলার ঘটনা ঘটল।

মঙ্গলবার (৩০ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানী মস্কোতে একটি ড্রোন হামলায় বেশ কয়েকটি ভবনের সামান্য ক্ষতি হয়েছে বলে রুশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। রাজধানী শহরের মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন বলেছেন, হামলায় কেউ গুরুতর আহত হয়নি। জরুরি পরিষেবা ‘ঘটনাস্থলে’ রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে রাজধানী মস্কোর কাছে এগিয়ে আসার সাথে সাথে রাশিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী বেশ কয়েকটি ড্রোনকে গুলি করে ভূপাতিত করে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে এসব ড্রোন কোথা থেকে এসেছে তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়।

এছাড়া ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে সোমবার ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা প্রধান জেনারেল কিরিলো বুদানভ কিয়েভে রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাব দ্রুত দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন।

বিবিসি বলছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ছবিতে রাশিয়ার রাজধানীর ওপরে আকাশে ধোঁয়ার চিহ্ন দেখা গেছে। অন্য ছবিগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবনের ভাঙা জানালা দেখা যাচ্ছে। মেয়র সোবিয়ানিন বলেছেন, কিছু বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

বিবিসির রাশিয়া সম্পাদক স্টিভ রোজেনবার্গ - যিনি মস্কোতে অবস্থান করছেন- বলেছেন, উত্তর-পশ্চিম মস্কোতে স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ২৪ মিনিটে তিনি একটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। বিস্ফোরণে তার বাড়ির জানালা কেঁপে ওঠে বলেও জানান তিনি।

এছাড়া প্রথম বিস্ফোরণের পর সকাল ৬টা ৫৮ মিনিটে আরেকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলেও জানিয়েছেন স্টিভ রোজেনবার্গ। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের কথোপকথন বিশ্লেষণ করে মস্কোর অনেক লোকও এই বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন বলে জানান তিনি।

স্থানীয় মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকালে মস্কোর আকাশে প্রায় ১০টি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা হয়। প্রধানত মস্কো শহরের ইস্ট্রা, ক্রাসনোগর্স্ক এবং ওডিনসোভো এলাকায় এসব ড্রোন ভূপাতিত করার ঘটনা ঘটে।

এর আগে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে আবারও বড় ধরনের বিমান হামলা চালায় রাশিয়া। মঙ্গলবার ভোরে নতুন করে এই হামলা চালায় রুশ সামরিক বাহিনী। চলতি মাসে কিয়েভে রাশিয়ার এটা ১৭তম বিমান হামলা।

কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে বলেছিলেন, ‘ব্যাপক আক্রমণ হচ্ছে! কেউ নিরাপদ আশ্রয় ত্যাগ করবেন না।’

কিয়েভের সামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হামলা প্রতিহত করছে। তবে রুশ মিসাইল বা ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ রাজধানীর ঐতিহাসিক পোডিল এবং পেচেরস্কি মহল্লাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় আঘাত হেনেছে।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, মঙ্গলবার ভোরে হওয়া এই হামলা চলতি মাসে কিয়েভে রাশিয়ার ১৭তম আক্রমণ। এছাড়া এ নিয়ে পরপর তৃতীয় দিনের মতো রাতের আঁধারে একই তীব্রতা নিয়ে কিয়েভে হামলা চালাল মস্কো। এর আগে সোমবার ইউক্রেনের এই রাজধানী শহরে দুই দফায় হামলা চালায় রাশিয়া।

সোমবারের হামলায় রাশিয়া ইরানের তৈরি শাহেদ ড্রোন এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে বলে কিয়েভ শহরের সামরিক প্রশাসন জানায়। শহরের সামরিক প্রশাসনের প্রধান সের্হি পপকো টেলিগ্রামে বলেছিলেন, ক্রমাগত এই আক্রমণের মাধ্যমে, শত্রুরা বেসামরিক জনগণকে গভীর মানসিক উত্তেজনার মধ্যে রাখতে চায়।

এর আগে রোববার রাতের আঁধারে কিয়েভে হামলা চালিয়েছিল রাশিয়া। ওই হামলাকে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কিয়েভে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা বলে মনে করা হচ্ছে। ব্যাপক ওই হামলায় একজন নিহত ও আরও কয়েকজন আহত হন। এছাড়া একইদিন কিয়েভের ওপর ৩৬টি ড্রোন ভূপাতিত করা হয় বলেও দাবি করে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ।

উল্লেখ্য, রাশিয়া সম্প্রতি কিয়েভের ওপর আক্রমণ ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক এসব হামলায় রাশিয়া তথাকথিত কামিকাজে ড্রোনের পাশাপাশি ক্রুজ এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহার করছে।

টিএম