ইউরোপের অন্যতম ছোট এবং দরিদ্র রাষ্ট্র মলদোভা। সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশ হয়েছে দেশটি। আর এরপরই ইউরোপীয় পলিটিক্যাল কমিউনিটি (ইপিসি) সামিটের দায়িত্ব পড়েছে দেশটির ঘাড়ে।

বৃহস্পতিবার মলদোভার রাজধানী থেকে সামান্য দূরে মিমি ক্যাসেল এবং ওয়াইনারিতে একত্রিত হবেন বিশ্বনেতারা। ইতোমধ্যেই সেখানে পৌঁছে গেছেন ৪৭টি দেশের রাষ্ট্রনেতারা।

রাশিয়া এবং বেলারুশ ছাড়া ইউরোপের অধিকাংশ দেশই এই গোষ্ঠীর অন্তর্গত। আরও বেশ কিছু দেশকে এর ভেতরে ঢোকানোর পরিকল্পনা আছে। বস্তুত, তুরস্ক, আজারবাইজান, আর্মেনিয়ার মতো দেশগুলোকেও এই সামিটে অংশ নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, কসোভো, বসনিয়াও এতে অংশ নেবে বলে জানা গেছে।

ইউক্রেন আলোচনা
গুরুত্বপূর্ণ এই সামিটে ইউক্রেন নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হবে। কীভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আরও বেশি করে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াতে পারে, সে বিষয়ে কথা বলবেন সকলে। বস্তুত, এর আগে প্রথম ইপিসি হয়েছিল প্রাগে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা প্রায় সলকলেই সেখানে একটি বিষয়ে কার্যত একমত হয়েছিলেন- ইপিসি আলোচনার অন্যতম শ্রেষ্ঠ মঞ্চ। ফলে ইউক্রেনকে সামনে রেখে আরও বিস্তারিত আলোচনার সম্ভাবনা আছে এই বৈঠকে।

মলদোভার ভবিষ্যৎ
একদিকে রোমানিয়া এবং অন্যদিকে ইউক্রেন; আর এর মাঝে ছোট্ট রাষ্ট্র মলদোভা। ১৯৯২ সালে এই রাষ্ট্রের একটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। রাশিয়া ঘনিষ্ঠ এই অংশের নাম ট্রান্সনিস্ট্রিয়া। বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ওই অঞ্চলে রাশিয়া তাদের সেনা মোতায়েন করে দিয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি বড় প্রশ্ন হলো, ইউক্রেনের পর রাশিয়া আরও পশ্চিমে অগ্রসর হবে কি না। সেক্ষেত্রে মলদোভাকে গ্রাস করা রাশিয়ার পক্ষে খুব কঠিন কাজ নয়। আর এই বিষয়টি মাথার রেখে মলদোভাকে ক্রমশ ইউক্রেনের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছে। এবারের সামিটে এই বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ
এই সামিটের আরেকটি লক্ষ্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে সকলকে একত্রিত করা। সে কারণেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরেও বেশ কিছু দেশকে এখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ইউরোপীয় নেতাদের অনেকেই মনে করেন, ইইউকে আরও বড় করা প্রয়োজন। কিন্তু ইইউতে যুক্ত হওয়ার নিয়ম খুবই কঠিন।

সেই নিয়ম কীভাবে বদলানো যায়, রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী মঞ্চ কীভাবে গড়ে তোলা যায়, এই সমস্ত বিষয়গুলোই আলোচনা হবে এই সম্মেলনে। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই আশা প্রকাশ করেছেন। এই সামিট থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা পাওয়া যাবে বলে তিনি মনে করেন।

এছাড়া গত ইপিসিতে ফ্যান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছিলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোর ছোটবেলার সমস্যা হলো, তারা মাঝে মাঝেই গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। সেই রাস্তা থেকে সরে গিয়ে সকলকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একত্রিত হতে হবে।

বস্তুত, ইউরোপের একাধিক দেশে কার্যত গৃহযুদ্ধের আবহাওয়া। আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়ার মধ্যেও সংকট চলছে। তুরস্কের নিজস্ব সমস্যা আছে। কসোভোয় বিক্ষোভ চলছে। বসনিয়া দীর্ঘ সময় লড়াই দেখেছে।

এই ধরনের ছোট ছোট লড়াইগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে শক্তিশালী ইউরোপ তৈরি হবে না বলেই মনে করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।

টিএম