শক্তিশালী এক বিস্ফোরণে উড়ে গেছে ইউক্রেনের খেরসন অঞ্চলের দিনিপ্রো নদীতে নির্মিত বিশাল এক বাঁধ। মঙ্গলবারের বিস্ফোরণে বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার পর খেরসনের অনেক অঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার আশঙ্কা, বাঁধ ধ্বংসের কারণে সেখানে মানবিক বিপর্যয় দেখা দেবে, হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়বেন।

বাঁধ উড়িয়ে দেওয়ার এই ঘটনায় রাশিয়াকে দায়ী করেছে ইউক্রেন। তবে রাশিয়া উল্টো দোষ চাপিয়েছে ইউক্রেনের ওপর। পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করা হলেও যুদ্ধে প্রভাব ফেলার জন্যই যে বাঁধটি ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে সেটি নিশ্চিত। তবে এতে লাভ কার, রাশিয়া নাকি ইউক্রেনের?

রাশিয়া অবশ্য ইতোমধ্যে বলেছে, কেন তারা নোভা কাখোভগার এই বাঁধটি ধ্বংস করবে? কারণ এটি তাদেরও ক্ষতি করেছে। এই বাঁধ ধ্বংসের কারণে দানিপ্রো নদীর পাড় থেকে সেনা ও বেসামরিকদের সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে রাশিয়া।

এছাড়া যে জলাধারে বাঁধটি ছিল সেই জলাধারের পানি দিয়ে ২০১৪ সালে জোরপূর্বক দখলকৃত ক্রিমিয়ায় পানি সরবরাহ করে রাশিয়া। বাঁধটি ধ্বংস হওয়ায় ক্রিমিয়ায় সুপেয় পানির অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

তবে— রাশিয়ার পরিকল্পনায় হয়ত বড় কিছু ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ইউক্রেনীয় সেনাদের সম্ভাব্য পাল্টা আক্রমণ রুখতে বাঁধটি উড়িয়ে দিয়েছে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণকে সফল করার জন্য— ক্রিমিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত যে বিস্তৃত অঞ্চল রুশ সেনারা গত বছর দখল করেছে, সেসব স্থানে ঢুকে পড়তে হবে ইউক্রেনীয় সেনাদের।

বিশেষ করে খেরসনের জাপোরিঝিয়ায় যে দুর্গ রুশ সেনারা গড়ে তুলেছেন সেটি ভেদ করতে হবে এবং তাদের দুভাগে বিভক্ত করে দিতে হবে যেন ক্রিমিয়াকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া যায় এবং বড় সফলতা অর্জন করা যায়।

তবে রুশ সেনারা তাদের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়েছে এবং খুঁজে বের করেছে কোথায় কোথায় ইউক্রেনের সেনারা হামলা চালাতে পারে। সেটি বিবেচনায় রেখে খেরসন ও জাপোরিঝিয়ায় শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে তারা; যেন কোনোভাবেই ইউক্রেনীয় সেনারা তাদের প্রতিরোধ ভেদ করে আজভ সাগরে পৌঁছাতে না পারে।

রুশ বাহিনীল প্রতিরোধ সত্ত্বেও নিশ্চিতভাবে ইউক্রেন সেখানে হামলার পরিকল্পনা করছিল। কিন্তু এখন বাঁধ ধ্বংস হওয়ায় তাদের পাল্টা হামলার বিষয়টি আরও জটিল হয়ে গেছে।

দিনিপ্রো নদী এমনিতেই বেশ প্রশস্ত। বাঁধ ধ্বংসের কারণে নদীর প্রশস্ততা আরও বেড়েছে। এখন ইউক্রেন যদি সেখানে হামলাকারী দল পাঠাতে চায় তাহলে উল্টো রুশ বাহিনীর হামলার মুখে পড়বে।

ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গেছে, যুদ্ধে সফলতা পেতে রাশিয়া আগেও বাঁধ ধ্বংস করেছে। ১৯৪১ সালে তৎকালীন সোভিয়েত সেনারা অগ্রসরমান নাৎসি বাহিনীকে আটকে দিতে এই দিনিপ্রো নদীর বাঁধই উড়িয়ে দিয়েছিল। এতে কয়েক হাজার মানুষ ধ্বংসের মুখে পড়েছিলেন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যেই বাঁধটি ধ্বংস করেছে— বর্তমানে দুই দেশকেই সেখানে বড় রদবদল করতে হচ্ছে। এছাড়া এর মাধ্যমে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত পাল্টা আক্রমণ শুরুর বিষয়টিতেও বিলম্ব করতে পারে।

সূত্র: বিবিসি

এমটিআই