কিছু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের ঢিলেঢালা মনোভাবের কারণে করোনা মহামারি মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছতে পারে বলে মনে করেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। তাদের উপেক্ষা করে সরাসরি কড়া পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিলেন তিনি।

করোনা সংক্রমণের হার যে মাত্রায় বেড়ে চলেছে তাতে ইস্টারের ছুটির পর তা নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। অথচ করোনার ‘তৃতীয় ঢেউ’ সত্ত্বেও জার্মানির কেন্দ্র (ফেডারেল) ও রাজ্য সরকারগুলো কিছুতেই মহামারি নিয়ন্ত্রণে কড়া পদক্ষেপের প্রশ্নে ঐকমত্যে আসতে পারছে না।

ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী এমন প্রেক্ষাপটে মেরকেল বিশেষ আইনের আশ্রয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মতি ছাড়াই দেশজুড়ে ব্যাপক কড়াকড়ির প্রচ্ছন্ন হুমকি দিলেন। রোববার রাতে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি মুখ্যমন্ত্রীদের ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে দ্রুত কড়া পদক্ষেপের এই ইঙ্গিত দেন।

মেরকেল ও মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে আলোচনায় যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার কয়েকটি মোটেই কার্যকর করা হচ্ছে না। প্রতি লাখের মধ্যে সাত দিনের গড় সংক্রমণের হার নির্দিষ্ট মাত্রা অতিক্রম করলে কোনো অঞ্চলে যে সব কড়াকড়ি কার্যকর করার কথা, কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রী নানা কারণ দেখিয়ে তা এড়িয়ে যাচ্ছেন।

রোববার সেই হার ছিল প্রায় ১২৫। কিছু ক্ষেত্রে নিয়ম শিথিল করার পথে এগোচ্ছেন কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রী। এমন ‘এমারজেন্সি ব্রেক’ সক্রিয় না করার ফলে করোনা সংক্রমণের হার দ্রুত বেড়ে চলেছে।

মেরকেল বলেন, সামাজিক যোগাযোগ কমানো, কারফিউ ও হোম অফিস বাধ্যতামূলক করার মতো নিয়ম কার্যকর না করলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে বলেই শঙ্কা করছেন তিনি। যেসব শ্রমিক বা কর্মীদের  কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে, তাদের জন্য সপ্তাহে কমপক্ষে দুইবার করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করার কথাও বলেন তিনি।

মুখ্যমন্ত্রীদের প্রতি আবেদনে কাজ না হলে অন্য পথে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে মেরকেল বলেন, দৈনিক সংক্রমণের হার এক লাখ ছোঁয়া পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করবেন না। প্রয়োজনে সংক্রমণ সুরক্ষা আইন কাজে লাগিয়ে ফেডারেল স্তরে একতরফা কড়া সিদ্ধান্ত প্রয়োগের পূর্বাভাস দিয়েছেন তিনি।

জার্মানির বিদায়ী এই চ্যান্সেলরের মতে, করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা ফেডারেল ও রাজ্য সরকারের মৌলিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। উল্লেখ্য, ইস্টারের পাঁচ দিন কড়া বিধিনিয়মের সিদ্ধান্ত নিয়েও চাপের মুখে মেরকেল পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। সে জন্য তিনি দেশের মানুষের কাছে ক্ষমাও চেয়েছিলেন।

এমন কড়া বার্তা শুধু মেরকেল নয়, বাভেরিয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মার্কুস স্যোডারের কণ্ঠেও শোনা যাচ্ছে। তার মতে, কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রী এখনও পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না। কোনো ব্যতিক্রম ছাড়া ‘এমারজেন্সি ব্রেক’ প্রয়োগের পক্ষে তিনি। মেরকেলের মতো তিনিও ইস্টারের ছুটির আগে এ বিষয়ে নতুন করে আলোচনার কোনো প্রয়োজন দেখছেন না। পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ১২ এপ্রিল পরবর্তী বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

রবার্ট কচ ইনস্টিউট এবং ফেডারেল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও করোনা সংক্রমণের চলমান হার সম্পর্কে গভীর দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান বলেন, ১০ থেকে ১৪ দিনের ‘আসল শাটডাউন’র প্রয়োজন রয়েছে। এই সময়ে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ ও ভ্রমণ কমিয়ে আনতে পারলে সংক্রমণের হার কমানো সম্ভব হবে।

চ্যান্সেলর মেরকেলের দফতরের প্রধান হেলগে ব্রাউন বলেন, জার্মানি এখন করোনাভাইরাস মহামারির সবচেয়ে বিপজ্জনক পর্যায়ে রয়েছে। তার মতে, করোনার ‘তৃতীয় ঢেউ’র সময়ে আরও বিপজ্জনক মিউটেশন সৃষ্টি হতে পারে। সেগুলো মোকাবিলায় এমনকি টিকাও কার্যকর না হতে পারে বলে মনে করেন তিনি। 

এএস