ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে নেই তৎপরতা
নাম-পরিচয় জানার পরও ভারতের মানসিক হাসপাতালে পড়ে আছেন ১৭ বাংলাদেশি
নাম-পরিচয় ও ঠিকানা সবই বলতে পারেন। কথাবার্তা, আচার-আচরণ সবই অন্য দশটা সুস্থ ও সাধারণ মানুষের মতো। তবুও বছরের পর বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের পাভলভ, লুম্বিনী, বহরমপুর ও পুরুলিয়ার কয়েকটি মানসিক হাসপাতালে আটকা পড়ে আছেন ১৭ বাংলাদেশি।
সবমিলিয়ে হাসপাতালগুলোতে আবাসিক রোগী হিসেবে ভর্তি আছেন ১৮ বাংলাদেশি। এরমধ্যে একজন বাদে তারা সবাই সুস্থ। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের ফেরানোর ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
বিজ্ঞাপন
রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কলকাতাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে আরেকটি ভয়াবহ তথ্য। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ থেকে পশ্চিমবঙ্গে একটি কবি সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে আবিদ হোসেন নামের এক বাংলাদেশি পুলিশের হাতে আটক হন— এরপর তার ঠাঁই হয় পাভলভ মানসিক হাসপাতালে। আর সুস্থ-সবল মানুষকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর ঘটনায় বিব্রত ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও।
বিজ্ঞাপন
গত ২২ মে আবিদকে শিয়ালদহ আদালতের মাধ্যমে পাভলভ হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ। তবে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের এক কর্মকর্তা।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা দেখি আবিদ সাহেব কানে কিছুটা খাটো। এইটুকু বাদ দিলে তার সমস্যা নেই বললেই চলে! আমরা দ্রুত পুলিশের মাধ্যমে আদালতকেও তার বিষয়ে এই রিপোর্ট দিই।’
আবিদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন, বাগমারির এক পরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে ঝগড়ার জেরে তাকে পুলিশ আটক করে। এরপর তাকে মানসিক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।
তিনি আরও দাবি করেছেন, তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট, ভিসা সব মানিকতলা থানায় আছে।
তবে ওই থানার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আবিদকে একটি মসজিদে বসে থাকা অবস্থায় পাওয়া যায়। অন্য থানার মাধ্যমে তার পাসপোর্ট, ভিসার ফটোকপি ও ছবি মিললেও সেগুলো দিয়ে তাকে বাংলাদেশে পাঠানো সম্ভব নয়।
মানসিক হাসপাতালের রোগীদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জানিয়েছে, পাভলভ ও লুম্বিনিতে ৭ জন করে ও বহরমপুর ও পুরুলিয়ায় ২ জন করে মোট ১৮ বাংলাদেশি ভর্তি আছেন।
তাদের মধ্যে কেউ কেউ সেই ২০১৪-১৫ সালের দিকে এসব হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এখন একজন বাদে সবাই সুস্থ হলেও তাদের ফেরানোর ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
মূলত বাংলাদেশ থেকেই সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করেছেন বিদেশি নাগরিকদের পুনর্বাসন টাস্কফোর্সের উপদেষ্টা মধুমিতা হালদার।
তিনি বলেছেন, ‘মানসিক হাসপাতালে যেসব বাংলাদেশি আছেন তাদের ব্যাপারে ঢাকায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু এখনো এ ব্যাপারে কোনো সাড়া মেলেনি।’
পাভলভ হাসপাতালে বন্দি থাকা আবিদের বয়স ৪০ বছরের বেশি। তার বাবা-মা নেই। এখন বাংলাদেশে তার পরিবার-পরিজনের খোঁজ বের করার চেষ্টা চলছে।
সূত্র: আনন্দ বাজার
এমটিআই