একটি বুলেট যেভাবে কেড়ে নিল চার বন্ধুর প্রাণ
সাত বন্ধু। যাদের প্রত্যেকের বয়স ১৮ থেকে ২৩ বছর। গ্রামের কাছের একটি জঙ্গলে পাখি শিকারের জন্য একসঙ্গে বেরিয়েছিলেন তারা। জঙ্গলে শিকারে গিয়ে সামান্য একটি ভুল তাদের জীবনে ডেকে এনেছে ভয়ানক এক অভিজ্ঞতা। যে ভুলের মাশুল দিতে হলো একে একে চারজনের জীবনের বিনিময়ে। মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটেছে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ উত্তরাখণ্ডে।
ভারতীয় দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, সাত বন্ধু গ্রামের পাশের এক জঙ্গলে বন্য পাখি শিকারে বেরিয়ে সামান্য ভুলের ভয়ানক মাশুল দিয়েছেন। এই তরুণদের একজনের কাছে একটি রাইফেল ছিল। তার শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখতে না পেরে হঠাৎ চাপ পড়ে যায় সেই রাইফেলে। বেরিয়ে যায় একটি বুলেট। সেটি আঘাত হানে আরেক বন্ধুকে। ফলে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।
বিজ্ঞাপন
এই দুর্ঘটনা নাড়িয়ে দেয় তিন বন্ধুকে। বন্ধুর মৃত্যু মেনে নিতে না পেরে বিষপানে আত্মহত্যা করেন তারা। ওই সাত তরুণের বাড়ি উত্তরাখণ্ডের তেহরি জেলার ভিলানগানার কুন্ডি গ্রামে। শনিবার সন্ধ্যায় পাশের চোলাহ টোক জঙ্গলে বন্য পাখি শিকারের জন্য বেরিয়ে তারা হৃদয়বিদারক এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হন বলে জানিয়েছেন ঘনসালি পুলিশ স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কুলদ্বীপ শাহ।
সাত বন্ধুর এই দলে বিপর্যয় আঘাত হানে যখন তাদের বন্ধু সন্তোষ পানওয়ার (১৯) বুলেটবিদ্ধ হন। আর এই বুলেট বেরিয়ে যায় আগে থেকেই লোড করে রাখা তার বন্ধু রাজিভ সিংয়ের (২২) রাইফেল থেকে।
বিজ্ঞাপন
ঘনসালির সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট পিআর চৌহান বলেন, রাজিভ ভারসাম্য হারিয়ে মাটিতে পড়ে গিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে বুলেট বেরিয়ে যায় এবং সেটি পানওয়ারকে আঘাত হানে। ঘটনাস্থলেই পানওয়ার মারা যান।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা চৌহান বলেন, বন্ধুর মৃত্যু দেখে অন্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। প্রথমে তারা সন্তোষের মরদেহ জঙ্গল থেকে বের করে গ্রামের পাশের একটি গোয়াল ঘরে নিয়ে আসেন। তারা এতটাই কষ্ট পেয়েছিলেন যে, তাদের অপরাধবোধ তৈরি হয় এবং একই রাইফেল থেকে গুলি করে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন তারা। কিন্তু পরবর্তীতে তারা এই সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলেন।
তাদের মধ্যে তিনজন— অর্জুন সিং (২৩), সোবান সিং (২৩) ও পঙ্কজ সিং (২৪) একসঙ্গে বিষপান করেন। পরে তাদের উদ্ধার করে রাজ্যের বালেশ্বর কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পৌঁছানোর আগেই তারা মারা গেছেন বলে চিকিৎসক জানান।
এদিকে, ওই ঘটনার পর থেকে রাজিভ সিং নিখোঁজ রয়েছেন এবং অন্য দু’জন রাহুল এবং সুমিত গ্রামে ফিরেছেন। পরে ওই এলাকার রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তারা তাদের দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কুন্ডি গ্রামের গ্রামপ্রধান কুলদ্বীপ পাওয়ার বলেন, সাত তরুণই একে অপরের বন্ধু ছিলেন। সম্প্রতি তারা চাকরি হারান।
তেহরি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইভা আশিষ শ্রীবাস্তব বলেন, চার তরুণের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। সবদিক মাথায় রেখে এই ঘটনার তদন্ত চলছে।
রাজিভ সিংয়ের রাইফেলের লাইসেন্স করা ছিল কি না জানতে চাইলে ঘনসালি বলেন, আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী— ওই অস্ত্রের জন্য রাজিভ অথবা তার বাবার কোনো লাইসেন্স করা ছিল না। অস্ত্রটি উদ্ধার অথবা রাজিভকে গ্রেফতার করা সম্ভব হলে আরও বিস্তারিত জানা যাবে।
এসএস