আজারবাইজানের বিচ্ছিন্ন অঞ্চল নাগোরনো-কারাবাখের আর্মেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর সদস্যরা আত্মসমর্পণ এবং অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে রাজি হয়েছে। বিতর্কিত এই ভূখণ্ডের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বাকুর সামরিক অভিযান শুরু করার ২৪ ঘণ্টা পর বুধবার আর্মেনীয় ও আজারবাইজানের সামরিক বাহিনী চুক্তিতে রাজি হয়েছে।

উভয় দেশই চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে; যা বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টা থেকে কার্যকর হয়েছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, নাগোরনো-কারাবাখে আর্মেনিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীকে নিরস্ত্র এবং ভেঙে দেওয়া হবে। এছাড়া ওই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ এবং সেখানে বসবাসকারী জাতিগত আর্মেনীয়দের বিষয়ে বৃহস্পতিবার আলোচনা শুরু হবে।

স্বঘোষিত ‘আর্টসাখ প্রজাতন্ত্র’ পরিচালনাকারী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বলেছেন, তারা আজারবাইজানের শর্তে রাজি হতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ বাকুর সেনাবাহিনী সীমান্তরেখা অতিক্রমের পর কৌশলগত কয়েকটি স্থাপনার দখল নেওয়ায় চুক্তিতে রাজি হওয়া ছাড়া তাদের কোনও উপায় ছিল না। আর এই সময়ে বিশ্ব কিছুই করেনি বলে অভিযোগ করেছেন আর্মেনিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর সদস্যরা।

বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বলেছেন, ‘আর্টসাখ প্রজাতন্ত্রের কর্তৃপক্ষ রাশিয়ার শান্তিরক্ষী বাহিনীর কমান্ডের কাছ থেকে অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।’

অন্যদিকে, আজারবাইজানও এই চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। চুক্তি ফলে নাগোরনো-কারাবাখের প্রায় এক লাখ ২০ হাজার জাতিগত আর্মেনীয়কে নিজেদের সমাজে একীভূত করে নেবে আজারবাইজান। কিন্তু অনেক আর্মেনীয় আজারবাইজানের এই পদক্ষেপের ব্যাপারে ভীত।

বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলে নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান কয়েক দশক ধরে বিবাদে লিপ্ত রয়েছে। নাগোরনো-কারাবাখ আজারবাইজানের ভূখণ্ডের ভেতরে অবস্থিত হলেও ১৯৯৪ সালের এক যুদ্ধের পর থেকে আর্মেনিয়ার সমর্থনে জাতিগত আর্মেনীয় বাহিনী ওই অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।

ইতিমধ্যে নাগোরনো-কারাবাখ ঘিরে দুই প্রতিবেশী আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়া অন্তত দুবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। ১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর প্রথমবার যুদ্ধে জড়ায় দেশ দুটি।

সাবেক সোভিয়েত এ দুই রাষ্ট্র বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে ২০২০ সালে ফের প্রাণঘাতী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। দুই দেশের সৈন্যদের হামলা-পাল্টা হামলায় সেই যুদ্ধে উভয়পক্ষের সাড়ে ৬ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

আর্মেনিয়া বলছে, কারাবাখে তাদের কোনও সামরিক বাহিনী নেই। এমনকি সেখানে কোনও ধরনের সামরিক হস্তক্ষেপও করা হয়নি। কিন্তু আজারবাইজান বরাবরই বলে আসছে, আর্মেনিয়ার সামরিক বাহিনী নাগোরনো-কারাবাখের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করা চেষ্টা করছে।

তবে চুক্তি অনুযায়ী জাতিগত আর্মেনীয়রা কারাবাখে আজারি নিয়ন্ত্রণে থাকবেন নাকি আর্মেনিয়ায় চলে যাবেন, সেটি এখনও পরিষ্কার নয়।

আজারবাইজানের সামরিক অভিযানে গত ২৪ ঘণ্টায় কয়েক ডজন নিহত এবং শত শত মানুষ আহত হয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো নাগোরনো-কারাবাখে আজারবাইজানের সামরিক অভিযানের তীব্র সমালোচনা করেছে।

তারা বলেছেন, কারাবাখ সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। বাকুর স্থল অভিযানে ইতিমধ্যে সেখানে ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি।

এসএস