প্রতীকী ছবি

করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ সংক্রমণ সেরে গেলেও সংক্রমিত ব্যক্তিরা অনেক সময় আগের মতো সুস্থ হন না, দীর্ঘদিন নানা ধরনের সমস্যা ভুগতে থাকেন তারা। অনেকের প্রচলিত এ ধারণাকে অতিশয়োক্তি মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

মূলত ভুল তথ্য এবং ভুল বা অস্পষ্ট ব্যাখ্যার কারণে লং কোভিডকে বেশি ভয়াবহ বলা হচ্ছে বলেও মনে করেন তারা।

বিএমজে এভিডেন্স-বেজড মেডিসিনে প্রকাশিত এক মতামতধর্মী লেখায় বিজ্ঞানীরা এমন মত প্রকাশ করেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মেডিক্যাল জার্নালটিতে গবেষকরা বলেন, ‘অতিরিক্ত বিস্তৃত সংজ্ঞা,’ গবেষণায় ‘পদ্ধতিগত ত্রুটি’ এবং যথাযোগ্য তদারকি কর্তৃপক্ষের অনুপস্থিতির কারণেই মূলত লং কোভিড নিয়ে অতিরিক্ত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

বিএমজে ম্যাগাজিনে গবেষণালব্ধ মতামত দেওয়া বিজ্ঞানীরা মনে করেন, খুব দুর্বলভাবে পরিচালনা করা সমীক্ষা এবং প্রাপ্ত তথ্যের অপর্যাপ্ত ব্যাখ্যা জনমনে আতঙ্ক ছড়ানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে।

তাদের দাবি, এমনকি যাদের কখনেও কোভিড-১৯ সংক্রমণ হয়নি তাদেরও সমীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করে লং কোভিড সম্পর্কে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছে।

জার্মানির ইয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের লং কোভিড সেন্টারের প্রধান আন্দ্রেয়াস স্টালমাখ মনে করেন বিএমজে-তে প্রকাশিত বিজ্ঞানীদের মতামত খুব তাৎপর্যপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ। মতামতধর্মী লেখাটির সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি প্রকাশনাটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ, এটা চিন্তার খোরাক দিয়েছে। প্রথম থিসিসে লেখকরা যে বিষয়টি সামনে এনেছেন, তা হলো- লং কোভিডকে খুব বড় করে দেখানো। আমি এর সঙ্গে অনেকটাই একমত।’

আরও পড়ুন: লং কোভিড : যেসব লক্ষণ দেখলে সতর্ক হবেন

গবেষকদের এই অংশ মনে করছেন, লং কোভিডের সঠিক সংজ্ঞায়ন, রোগ নির্ণয়ের মানদণ্ড এবং রোগীকে ভালোভাবে নিরীক্ষা করে তথ্য পরিবেশন করলে সঠিক তথ্য উঠে আসবে, রোগটি সম্পর্কে সবার প্রকৃত ধারণাও হবে।

বিএমজে ম্যাগাজিনে প্রকাশিত নিজেদের মতামতে বিজ্ঞানীরা এমন অনেক সমীক্ষার দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন যেগুলোতে সংশ্লিষ্ট রোগীদের আদৌ কোভিড-১৯ সংক্রমণ হয়েছিল কিনা সে বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়নি। আবার অনেক গবেষণায় এমন সব লক্ষণকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে যেগুলো সার্স-কোভিড-২-এ সংক্রমিত রোগীদেরও থাকতে পারে।

আরও পড়ুন: লং কোভিড : এক বছরের মধ্যে চলে যায় উপসর্গ

গবেষকদের লেখায় এ বিষয়ে জার্মান সোসাইটি ফর নিউরোলজি (ডিজিএন)-এর মহাসচিব পিটার বার্লিটের বক্তব্যও তুলে ধরা হয়। বার্লিট সেখানে বলেন, ‘এখন মোটামুটি ২০০টির মতো লক্ষণকে কোভিড-১৯-এর লক্ষণ মনে করা হয়। এগুলোর প্রায় সবই মোটাদাগে অনির্ধারিত। এগুলো যে (কোভিড-১৯) রোগটির সঙ্গে সত্যিই সম্পর্কযুক্ত সে তা নিশ্চিত নয়।’

তবে বলা হচ্ছে, বিএমজের মতামত বিশ্লেষণে যা-ই বলা হোক, মানবদেহে লং কোভিডের ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া এখনেও অস্বীকার করা যাবে না। কারণ, সারা বিশ্বে এখনও অনেক মানুষ লং কোভিড ভুগছেন।

টিএম