ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারবিরোধী বিক্ষোভে মৃত্যুর মিছিল অব্যাহত আছে মিয়ানমারে। শুক্রবার (৯ এপ্রিল) দেশটিতে নিহত হয়েছেন আরও ১০ জন। তবে জান্তা সরকারের দাবি, বিক্ষোভ পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত হয়ে এসেছে দেশটিতে, কারণ জনগণ শান্তি চায়।

শুক্রবার মিয়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনের নিকটবর্তী বাগো শহরে এক বিক্ষোভকারীদের দিকে  রাইফেল গ্রেনেড ছুড়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, সেখানে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন এবং মরদেহগুলো একটি প্যাগোডার পাশে স্তুপ করে রাখা হয়েছে।

তবে মিয়ানমার নাও নিউজ এবং মাওকুন অনলাইন নিউজ ম্যাগাজিন বলছে, নিহতের সংখ্যা অন্তত ২০ এবং আহতও হয়েছেন অনেকে। নিহতের সঠিক সংখ্যা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না, কারণ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা প্যাগোডাটি ঘিরে রেখেছে।

দেশটির মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, গত ১ মে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহতের সংখ্যা ছয়শ ছাড়িয়েছে। গত দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশজুড়ে সামরিক সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলায় কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে মিয়ানমার।

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের দাবি, মিয়ানমারে উত্তেজনা অনেকটাই প্রশমিত হয়ে আসছে এবং খুব শিগগিরই সরকারের মন্ত্রণালয়, ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হবে।

শুক্রবার দেশটির রাজধানী নেইপিদোতে এক সংবাদ সম্মেলনে জান্তা মুখপাত্র জেনারেল জও মিন তুন বলেন, ‘মিয়ানমারের বিক্ষোভ পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসছে; এর প্রধাণ কারণ, দেশের শান্তিপ্রিয় জনগণ আমাদের পাশে আছে। জনগণের প্রতি আমাদের অনুরোধ— নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করুন এবং তাদের সহযোগিতা করুন।’

আন্তর্জাতিক বিশ্ব মিয়ানমারের বর্তমান সরকারের পাশে আছে দাবি করে জও মিন তুন বলেন, ‘আমরা বাইরের দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখছি এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও আমাদের সহযোগিতাপূর্ণ বন্ধন অটুট আছে। যারা বলছে, আন্তর্জাতিক বিশ্ব আমাদের পাশে নেই, তারা ভুয়া খবর ছড়াচ্ছে।’

এদিকে, শুক্রবার মিয়ানমারের কারাবন্দিদের সহায়তা দানকারী সংস্থা অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়শেন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন ৬১৪ জন, যাদের ৪৮ জনই অপ্রাপ্তবয়স্ক। এছাড়া বর্তমানে দেশটিতে রাজনৈতিক কারাবন্দিদের সংখ্যা ২ হাজার ৮০০ ছাড়িয়ে গেছে।

এএপিপির বিবৃতির পরই মিয়ানমারের বিক্ষোভকারীদের সম্মান জানিয়ে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে দেশটিতে ‍নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন,কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও সুইজারল্যান্ডসহ ১৮ টি দেশের রাষ্ট্রদূতরা।

বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘মিয়ানমারে বিক্ষোভে যারা নিহত হয়েছেন, তাদের আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। একটি শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও মুক্ত মিয়ানমার গঠনের সংগ্রামে যারা তাদের সর্বস্ব হারিয়েছেন, তাদের পাশে আছি আমরা। আমরা এই মর্মে একমত—মিয়ানমারে সংঘাত অবশ্যই বন্ধ করতে হবে, সব রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে এবং গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে হবে।

সূত্র: রয়টার্স

এসএমডব্লিউ