বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে করোনা ভাইরাসের ১০ কোটি ডোজ টিকা দেওয়া সম্পন্ন করেছে ভারত। টিকাদান কর্মসূচি শুরুর মাত্র ৮৫ দিনের মধ্যে দেশটি এই মাইলফলক অর্জন করেছে। এমন ভালো খবরের পাশাপাশি ভারতে খারাপ খবরও রয়েছে। দেশটিতে করোনাভাইরাস মহামারির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। গত পাঁচদিন ধরে লক্ষাধিক করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। 

এরইমধ্যে গতকাল থেকে টিকা উৎসব শুরু করেছে ভারত। এমন এক সময়ে ভারত এই টিকা উৎসবের আয়োজন করল, যখন একদিকে দেশটির ১০ কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে, আবার দেশটির অনেক রাজ্যে টিকার ঘাটতির বিষয়টি নিয়েও আলোচনা চলছে। 

রোববার থেকে ভারত চারদিনের যে টিকা উৎসব শুরু করেছে তার মধ্যে দিয়ে দেশের বেশিরভাগ মানুষকে করোনার টিকা নিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বলা হচ্ছে যাদের বয়স ৪৫ বছরের বেশি এই উৎসবের মধ্যে তারা যেন দ্রুত করোনার টিকা নিয়ে নেন। 

এদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টিকা উৎসব উপলক্ষ্যে চারটি বিষয় মাথায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। টুইটে মোদি লেখেন- 

১) যাদের করোনা টিকার খুব প্রয়োজন তাদের সাহায্য করুন, অগ্রাধিকার দিন।
২) করোনা আক্রান্তরা যাতে চিকিৎসা পান, সেই দিকটি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।
৩) দেশের প্রত্যেক নাগরিককে মাস্ক পরতে হবে।
৪) কোনো এলাকায় কেউ কোভিড আক্রান্ত হলে ওই এলাকাটিকে মাইক্রো–কনটেনমেন্ট জোনের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দেন তিনি। 

এছাড়া টিকা উৎসবের ঘোষণা দিয়ে গতকাল মোদি বলেন, করোনার বিরুদ্ধে এটি আমাদের দ্বিতীয় যুদ্ধ। তাই ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। সমাজকে পরিচ্ছন্ন রাখুন। 

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম শনাক্ত হয় প্রাণঘাতী সার্স-কোভ-২ ভাইরাস, যা বিশ্বে সাধারণভাবে পরিচিতি পায় করোনাভাইরাস নামে। শনাক্ত হওয়ার তিন মাসের মধ্যে বিশ্বজুড়ে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাসটি। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ যদিও অভিযোগ করে আসছে, চীনের গবেষণাগারে এই ভাইরাসটি কৃত্রিমভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে, তবে চীন বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, প্রাকৃতিকভাবেই আবির্ভাব ঘটেছে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসটির।

কেন্দ্রঘোষিত এই টিকা উৎসবে ভারতের রাজ্যগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যত বেশি সম্ভব মানুষকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে।  ইতোমধ্যে বেশ কিছু রাজ্য এই উৎসবে এগিয়ে এসেছে। যেমন উত্তরপ্রদেশ সরকার ৬ হাজার টিকাকরণ কেন্দ্র চালু করেছে। অন্যদিকে বিহার সরকার জানিয়েছে, ৪ দিনে ৪ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। যদিও মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাবের মতো কিছু রাজ্য অভিযোগ করেছে তাদের কাছে পর্যাপ্ত টিকা নেই। অনেক টিকাকরণ কেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে। 

টিকার ঘাটতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, দেশে টিকার কোনো ঘাটতি হবে না। ঠিক সময়ে পর্যাপ্ত টিকা পাবে সব রাজ্য। 

ভারতের করোনা পরিস্থিতি 
প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ মানুষকে টিকা দেওয়ার পরও ভারতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। করোনা সংক্রমণে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে সংক্রমণের দিক থেকে বর্তমানে দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারত। এর আগে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল ব্রাজিল, ভারতের অবস্থান ছিল তৃতীয়। সোমবার ওয়ার্ল্ডোমিটার জানিয়েছে, গত বছর করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ভারতে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১ কোটি ৩৫ লাখ ২৫ হাজার ৩৬৪ জন, ব্রাজিলে এই সংখ্যা ১ কোটি ৩৪ লাখ ৮২ হাজার ৫৪৩। ব্রাজিলের চেয়ে ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ৪২ হাজার ৮২১ বেশি।

এনএফ