সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরুর পর এটি ছিল তার প্রথম বিদেশ সফর। বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিবেচনায় বিভিন্ন কারণেই গুরুত্বপূর্ণ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দু’দিনের এই রাষ্ট্রীয় সফরটি।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মপ্রক্রিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবেই যুক্ত ভারত। চলতি বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করেছে বাংলাদেশ। গত ৫০ বছরে নানা সময়ে টানাপোড়েন আসা সত্ত্বেও এটি স্বীকার করতে হবে— ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নতুন গতি লাভ করে এবং বর্তমানে এই সম্পর্ক সর্বোচ্চ সুসময় পার করছে।

কয়েকটি কারণ কাজ করছে এই সুসময়ের পেছনে। প্রথমত, গত কয়েক বছরে অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক খাতগুলোতে প্রভূত অগ্রগতি সাধন করেছে বাংলাদেশ। যার ফলে ইতোমধ্যে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে দেশটির নাম। ভারতের সঙ্গ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করা হলে এই অগ্রগতি ধরে রাখা অনেক সুবিধাজনক এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রধান কর্মকর্তারা বিষয়টি বেশ ভালোভাবেই বোঝেন।

দ্বিতীয়ত, সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইসলামপন্থি দলগুলো। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ দেশটির অগ্রগতির পথে সবচেয়ে বড় বাধা এবং ২০১৬ সালে ঢাকার হোলি আর্টিসান ক্যাফেতে জঙ্গি হামলার স্মৃতি আন্তর্জাতিক বিশ্ব এখনও ভুলতে পারেনি। ওই হামলায় নিহত ২২ জনের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন বিদেশী নাগরিক।

বাংলাদেশ সরকার অবশ্য সন্ত্রাসবাদ দমনে কাজ করে চলছে। কিন্তু এ কাজে পূর্ণ সাফল্যের জন্য ভারতের সহযোগিতা প্রয়োজন।

তৃতীয়ত, ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নিজেদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগী সংস্থা সার্ককে সক্রিয় করতে উদ্যোগ নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। তার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ের পর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে সার্কের সব সদস্যদেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তিনি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগে পাকিস্তান ও নেপাল সাড়া না দিলেও বাংলাদেশ থেকে যে বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিক্রিয়া তিনি পেয়েছেন, তা অভূতপূর্ব।

চতুর্থত, গত কয়েক বছর ধরে বঙ্গোপসাগরে জরিপ ও ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলে অর্থনৈতিক ও অবকাঠাগত উন্নয়নকে গুরুত্ব দিচ্ছে ভারত। ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশের সহযোগিতা ব্যতীত এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

পঞ্চমত, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে উভয় দেশের মধ্যে। বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থল বন্দর দিয়েই দু’দেশের মধ্যে অধিকাংশ বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে এর আওতা আরো বাড়তে সম্প্রতি বাংলাদেশের ফুলবাড়ি করিডোর এবং দাওকি-তামাবিল রুটকেও অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উষ্ণ করতে ভারতের আগ্রহের অন্যতম প্রচ্ছন্ন কারণ চীন। বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার চীন এবং ২০১৯০-২০ অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য হয়েছে ১২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

তাছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ আরো নিবিড় করতে যে কয়েকটি দেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্থাপণ করতে চাইছে চীন, তার মধ্যে বাংলাদেশও অন্তর্ভূক্ত। চীনের দক্ষিণ এশিয়া বেল্ট বা বলয়েরও অন্যতম সদস্য বাংলাদেশ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের এই ঘনিষ্ঠতাই মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের জন্য। বিজেপি চাইছে, এ জায়গায় চীনকে সরিয়ে ভারতকে প্রতিস্থাপন করতে।  

সূত্র: সাউথ চায়না পোস্ট

এসএমডব্লিউ