‘করোনা দ্বিতীয় দফায় তুফানের মতো আঘাত হেনেছে ভারতে। তবে রাজ্যগুলোকে বলছি, দেশ লকডাউন করে দেওয়াটা হবে শেষ অস্ত্র। সংক্রমণ ঠেকাতে ব্যক্তিগতভাবে সচেতন হতে হবে আমাদের। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ আর ঘরের বাইরে বের হবেন না।’

দেশজুড়ে ফের করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর মঙ্গলবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এমন কথা বলে দেশের সর্বস্তরের মানুষ ও রাজ্যগুলোকে যে কোনো মূল্যে ফের দেশে লকডাউন ঠেকানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

মোদি বলেন, ‘আমাদের উচিত হবে লকডাউন ঠেকানো। যদি আপনারা সবাই একসঙ্গে কাজ করেন, সচেতনতা তৈরি করেন তাহলে আমার মনে হয় লকডাউনের প্রয়োজন হবে না। রাজ্যগুলোকে অনুরোধ করবো, যেন তারা লকডাউনকে শেষ অস্ত্র হিসেবে দেখে।’

রাজ্যগুলোকে ছোট ছোট এলাকা ধরে ‘কনটেইনমেন্ট জোন’ করে সংক্রমণ ঠেকানোর পন্থা অবলম্বনের আহ্বান জানান মোদি। তিনি মহামারির কারণে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘আমরা অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি দেশবাসীর স্বাস্থ্যেরও যত্ন নেব।’

করোনার প্রকোপ সামলানো ও যথোপযুক্ত পরিকল্পনা করতে ব্যর্থতার অভিযোগে ভারতজুড়ে বর্তমানে ব্যাপক সমালোচিত মোদি এও বলেন, ‘জীবন বাঁচানোই আমাদের লক্ষ্য। তবে যতটা সম্ভব জীবিকা বাঁচানো আর অর্থনৈতিক কার্যক্রমকেও গুরুত্ব দিতে হবে।’  

ভারতে দৈনিক করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা পৌনে তিন লাখে গিয়ে ঠেকলেও তার সরকারের এখনই দেশ লকডাউন করার পরিকল্পনা যে নেই তা স্পষ্ট করে মোদি হাসপাতালে পর্যাপ্ত শয্যা, অক্সিজেন ও টিকা নিশ্চিতের দিকে তার সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানান।  

জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে মোদি বলেন, ‘দেশ লকডাউন করে দেওয়ার প্রশ্নই নেই এখন। যদি দেশের মানুষ, বিশেষ করে তরুণ ও যুবকরা এগিয়ে আসে তাহলে ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকানো সম্ভব। এই মুহূর্তে যাদের খুব প্রয়োজন, তাদের সাহায্য করুন।’

প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘প্রথম দফার প্রকোপ থেকে যখন সেরে উঠছি ঠিক সেই মুহূর্তে দ্বিতীয় দফায় করোনার প্রকোপ শুরু হয়েছে দেশে। যারা প্রিয়জন হারিয়েছেন তাদের কষ্ট আমি বুঝি কিন্তু সংকট বড় হলেও ধৈর্য্য ধরে এই সংকট মোকাবিলা করতে হবে।’

মোদির এই ভাষণের আগে দেশটির হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন, শয্যা আরও নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রের তীব্র সংকটের সঙ্গে তা নিয়ে মানুষের ক্ষোভের খবর জানা যাচ্ছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, অনেক হাসপাতালে কয়েক ঘণ্টা চলার মতো অক্সিজেন রয়েছে।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ভারত। আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। গত কয়েকদিন ধরে দেশটির দৈনিক করোনা সংক্রমণ দুই লাখ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন রেকর্ড ১ হাজার ৭৬১ জন।

এএস