চলমান করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে থাকা ভারত সরকারকে অ্যাম্বুলেন্স ও স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে সহযোগিতা করার প্রস্তাব দিয়েছে পাকিস্তানের অন্যতম বৃহৎ দাতব্য সংস্থা এধি ফাউন্ডেশন। গত শুক্রবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লেখা এক চিঠিতে এধি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ফাইসাল এধি এই প্রস্তাব দেন।  

চিঠিতে নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ্য করে ফাইসাল এধি বলেন, ‘আপনাদের দেশে বর্তমানে মহামারির যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। প্রতিবেশী ও বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে এই পরিস্থিতে সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি আমরা আপনাদের পাশে দাঁড়াতে চাই।’

কী প্রকারে সেই সহযোগিতা হতে পারে, তা ব্যাখ্যা করে ফাইসাল এধি বলেন, ‘আমরা ৫০ টি অ্যাম্বুলেন্স এবং সেই অনুপাতে স্বাস্থকর্মী ও করোনা চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ভারতে পাঠাতে চাই।’

‘আমরা আপনাদের সহযোগিতা করতে চাই, কারণ ভারতে এখন করোনার যে পরিস্থিতি তা সহ্যের অতীত। পাকিস্তানে আমাদের করোনা রোগীদের সেবা দেওয়া এবং এ ধরনের পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে।’

করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে ভারত সরকারের অনুমতি ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া এধি ফাউন্ডেশনের আর কিছু চাওয়ার নেই উল্লেখ করে চিঠিতে ফাইসাল এধি লেখেন, ‘আমাদের দলের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সব ব্যবস্থাই আমরা করব। আমাদের কেবল আপনার অনুমতি ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সাহায্যটুকু প্রয়োজন।’

পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় ও প্রধান দাতব্য ও মানবিক সহায়তা দানকারী সংগঠনগুলোর একটি হলো এধি ফাউন্ডেশন। দেশজুড়ে বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স ও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার পাশাপাশি অনাথ আশ্রম, ও বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ ও শিক্ষা কার্যক্রমও পরিচালনা করে এই সংগঠনটি।

পাকিস্তানের দরিদ্র মানুষের সেবায় আত্মোৎসর্গ করা আব্দুল সাত্তার এধি ছিলেন এই ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা। ২০১৬ সালে সাত্তার এধির মৃত্যুর পর থেকে তার ছেলে ফাইসাল এধি সংগঠনটি পরিচালনা করছেন।

১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর থেকেই বৈরী সম্পর্ক চলছে দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের। বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পাশপাশি জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যের অধিকার প্রশ্নে এই বৈরীতা পেয়েছে চরম রূপ।

ভারত ও পাকিস্তান— উভয় দেশই জম্মু ও কাশ্মিরকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতালাভের পর জম্মু ও কাশ্মির ইস্যুতে এ পর্যন্ত তিনবার বড় যুদ্ধে জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান।

২০০৩ সালে ভারত ও পাকিস্তান সরকারের মধ্যে এক চুক্তির পর থেকে এখন পর্যন্ত যদিও কাশ্মির সীমান্তে যুদ্ধবিরতি চলছে, তবে ২০১৯ সালে ভারত সরকার সংবিধান সংশোধন করে কাশ্মিরের স্বায়ত্ত্বশাসন বাতিলের পর ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল দু-দেশের সম্পর্ক।

তবে ভারতের সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতিতে পাকিস্তান কিছুটা হলেও তার বৈরী অবস্থান থেকে সরে এসেছে বলে মনে করছেন উপমহাদেশের আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা। কারণ, কেবল এধি ফাউন্ডেশনই নয়, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে গোটা পাকিস্তানই কার্যত ভারতের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে। সে দেশের টুইটারে ট্রেন্ডিং হয়ে গেছে #ইন্ডিয়ানলাইভসম্যাটার এবং #ইন্ডিয়ানিডসঅক্সিজেন— হ্যাশট্যাগ দু’টি।

এমনকি দেশটির অনেকে নাগরিক এই কঠিন সময়ে ভারতকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বরাবর আরজিও জানিয়েছেন। টুইটারসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক সাধারণ পাকিস্তান নাগরিককেই ভারতের জন্য প্রার্থনা করার আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য ও ছবি পোস্ট করেছেন।

ভারতে গত প্রায় দেড় মাসধরে লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার। দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর হিসেবে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে বর্তমানে শীর্ষে আছে ভারত। শুক্রবার ভারতজুড়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৪৫ হাজার ১৪৭ জন এবং এই দিন এ রোগে মারা গেছেন ২৬২১ জন।

সূত্র: আলজাজিরা, ইন্ডিয়া টাইমস

এসএমডব্লিউ