প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অটোমান সাম্রাজ্যের তথা বর্তমান তুরস্কের সেনাবাহিনীর হাতে আর্মেনীয়দের হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শনিবার (২৪ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে তিনি এই স্বীকৃতি দেন।

তবে অত্যান্ত স্পর্শকাতর এই ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এই স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করেছে তুরস্ক। অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের দিনগুলোতে আর্মেনীয়দের বিরুদ্ধে বর্বরতা বা মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করলেও সেটাকে ‘গণহত্যা’ বলে মানতে নারাজ আঙ্কারা।

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এই ঘোষণার পর শনিবার তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে ‘পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান’ করছে আঙ্কারা। টুইটারে দেওয়া কঠোর এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমাদের ইতিহাস নিয়ে কারও কাছ থেকে আমরা কোনো শিক্ষা নেব না।’

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, জো বাইডেনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টই আর্মেনিয়া ইস্যুতে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যবহার করেননি। কারণ এতে সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য তুরস্কের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে বলে তাদের উদ্বেগ ছিল।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন কী বলেছেন
শনিবার দেওয়া বিবৃতিতে বাইডেন বলেছেন, ‘অটোমান সাম্রাজ্যের শাসনামলে আর্মেনীয় গণহত্যায় নিহত সকলকে আমরা স্মরণ করছি এবং এ ধরনের বর্বরতা পুনরায় ঘটা প্রতিরোধ করতে আমরা আবারও অঙ্গীকার করছি।’

তিনি আরও বলেন, এটা আমরা মনে রাখবো, কারণ এ ধরনের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যেন আমরা সব সময় সতর্ক থাকতে পারি। তার দাবি, এটা কাউকে দোষারোপ করার জন্য বলা হচ্ছে না বরং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন আর কখনও না ঘটে তা নিশ্চিত করাই তার লক্ষ্য।

এর আগে এই হত্যাকাণ্ডকে গণত্যার স্বীকৃতি দিতে ২০১৯ সালে ভোটাভুটিতে অনুমোদন দেয় মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ। জো বাইডেন সে সময় ভোটের এই ফলাফলকে স্বাগত জানিয়েছিলেন।

আর্মেনিয়া-তুরস্কের প্রতিক্রিয়া কী?

আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান বলেছেন, বাইডেনের এই বক্তব্য নিহত সবার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়েছে। টুইটে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার ও বৈশ্বিক মূল্যবোধ রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় অবস্থান আরও একবার সামনে এলো।’

তবে এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, ‘বাইডেনের বক্তব্যের একটি অংশকে তুরস্ক প্রত্যাখ্যান করছে এবং একইসঙ্গে নিন্দা জানাচ্ছে।’

তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে যে, এর ফলে উভয় দেশের পারস্পারিক বিশ্বাস ও বন্ধুত্বে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হবে।

সূত্র: বিবিসি

টিএম