অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা বা ব্রাজিলের মতো দেশগুলোতে দাবানলে একরের পর একর বন পুড়ে যাওয়ার ঘটনা প্রতিবছরই ঘটে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো ফলাও করে প্রচার করে সে আগুনের খবর। তবে ভারতের মিজোরামে অনেকটা নীরবে আগুনে পুড়ে শেষ হয়েছে ৫ হাজার ৮০০ একর বন।  

বলা হচ্ছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দাবানলের ঘটনা বাড়ছে। এ বছর এখনও পর্যন্ত ১২টির মতো এমন ঘটনা ঘটেছে। মিজোরামে আগুন নিয়ন্ত্রণে সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্র রাজ্য সরকারের সাথেও কথা বলেছে।

গত সপ্তাহে মিজোরামে যে দাবানল তৈরি হয় তা নিয়ন্ত্রণে আছে আপাতত। আগুন ওই রাজ্যের দুটি জেলার ছয়টি শহর ও গ্রামেও পৌঁছেছিল। তবে এতে কারো নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ভারতীয় বিমান বাহিনীকেও সহায়তা করতে হয়েছে।

ভারতের সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন যে, আগুনে ছয়টি জেলায় ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৫,৮০০ একর বন ধ্বংস হয়েছে। পরিবেশবিদরা এলাকায় আগুন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এটা পরিষ্কার যে আমরা আমাদের সংবেদনশীল প্রাকৃতিক অঞ্চলগুলোকে বাঁচাতে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিচ্ছি না।

কীভাবে আগুন লেগেছিল?
মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিজোরামের লুংলেই জেলায় আগুনের সূত্রপাত হয়। এর পরে এটি ধীরে ধীরে আশপাশের জেলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। পরে কেন্দ্র সরকার এ বিষয়ে মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গার সঙ্গে কথা বলে তা কাটিয়ে উঠতে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দেয়। রাজ্য সরকার আগুন নিয়ন্ত্রণে ভারতীয় বিমান বাহিনীর কাছ থেকে সহায়তা চেয়ে আসছিল এবং সে মোতাবেক আগুন নেভানোর জন্য তাদের দুটি হেলিকপ্টারও কাজে লাগানো হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও আগুন ধীরে ধীরে শহরাঞ্চলে এবং জনবসতিতে ছড়িয়ে পড়ে।

আগুন মূলত রাজ্যের ছয়টি জেলাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। তবে এতে কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। দমকল বাহিনীর ১১ জন কর্মী অবশ্য আহত হয়েছেন আগুন নেভানোর যুদ্ধে নেমে। 

মিজোরাম রাজ্যের ঊর্ধ্বতন একজন সরকারি কর্মকর্তা বলছেন, আগুনে বনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং প্রায় ৫,৮০০ একর বন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। আগুনে এলাকার ৫৩টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ২০টি পোষা প্রাণী মারা গেছে। অনেক লোককে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। 

তিনি বলেছেন যে কিছু এলাকায় আগুন এখনও জ্বলছে। রাজ্যে ইতোমধ্যে করোনার প্রাদুর্ভাব রয়েছে। এখন এই আগুন দুর্দশা বাড়িয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত বিবরণের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। রাজ্য সরকার আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে তদন্ত করবে। এই আগুন মানবসৃষ্ট বলে ইঙ্গিতও দেওয়া হচ্ছে।

মিজোরামের ৮৫ শতাংশের মতো বন রয়েছে। গ্রীষ্মে সেখানে প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নাগাল্যান্ড ছাড়াও এ বছর মণিপুর ও অরুণাচল প্রদেশেও বড় আকারের দাবানল হয়েছে।

লুংলেইভিত্তিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম মিজায়েল উল্লেখ করেছেন যে, আগুন অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে এখনও গ্রামের কিছু জনবসতিহীন অংশে আগুন জ্বলছে। আমরা সেখানে নজর রাখছি। প্রবল বাতাস এবং শুষ্ক আবহাওয়া আগুনের কারণ হতে পারে। 

পরিবেশবিদদের উদ্বেগ
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সমস্যার সমাধান আরও বিস্তৃত হওয়া উচিৎ। এলাকায় আগুনের ঘটনা বাড়ছে।

ড. যতীন কুমার ব্যানার্জি নামে একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রতি বছর কোনো না কোনো জঙ্গলে ভয়াবহ আগুন লাগে এবং প্রতিবারই আমরা এই ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়ি। প্রতি বছর বর্ষার আগে মিজোরামে পানির অভাব হয়। আর এবার সরকারের পুরো নজর করোনার দিকে। এটা সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। 

এই আগুনে বন ধ্বংস হয়ে তা পরিবেশের ওপর খুব বিরূপ প্রভাব ফেলেছে বলেও মনে করেন তিনি। 

আর এক পরিবেশ বিশেষজ্ঞ বলেন, শুধু এ বছরই এই এলাকায় প্রায় এক ডজন আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। তবে সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ থেকে কোনো শিক্ষা নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। করোনার ক্রমবর্ধমান প্রাদুর্ভাব এই উদাসীনতার একটি প্রধান কারণ হতে পারে। তবে আমাদের এ জাতীয় হুমকি সম্পর্কেও সতর্ক থাকতে হবে। ঘন ঘন এ ধরনের ঘটনা এলাকার জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে, যে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব না। 

মিজোরামের মোট এলাকার ৮৫.৪১ শতাংশ বনাঞ্চল ছিল। তবে ২০০২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে দাবানল এবং অবৈধভাবে গাছ কেটে ফেলার কারণে ৪.৮ শতাংশ বনাঞ্চল হ্রাস পেয়েছে।

এনএফ