দক্ষিণ আফ্রিকার বৃহত্তম দেশ ব্রাজিলে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৪ লাখ ছাড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে এই তথ্য।

বিবৃতিতে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার— ২৪ ঘণ্টায় ব্রাজিলে মারা গেছেন ৩ হাজার ১ জন করোনা রোগী। এতে, মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৪ লাখ ১ হাজার ১৮৬ জনে।

করোনায় মৃতের তালিকায় এখন ব্রাজিলের ওপরে আছে মাত্র একটি দেশ— যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মারা গেছেন ৫ লাখ ৮৮ হাজার ৪১২ জন।

বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে যে কয়েকটি দেশে এ রোগে মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় দেশ ব্রাজিল। আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান বলছে, ২১ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশটির প্রতি ১ লাখ মানুষের মধ্যে করোনায় মারা গেছেন ১৮৯ জন।

চলতি বছরের শুরু থেকে ব্রাজিলে হু হু করে বাড়ছিল করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। পরিস্থিতি এমন রূপ নিয়েছিল যে, অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে গিয়ে ভেঙে পড়ার অবস্থায় পৌঁছেছিল দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলের হাসপাতালগুলো।

যদিও ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, সংক্রমণের সর্বোচ্চ পর্যায় তারা পেরিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে, কিন্তু এখনো ব্রাজিলে প্রতিদিন করোনায় মারা যাচ্ছেন গড়ে ২ হাজার ৫২৬ জন। প্রতিদিনের মৃত্যুর গড় হিসেবে এখন ব্রাজিলের সামনে আছে একটি মাত্র দেশ— ভারত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রাজিলে করোনার উচ্চ সংক্রমণের মূল কারণ এই ভাইরাসটির ব্রাজিলীয় ধরন। গবেষণায় দেখা গেছে সার্স-কোভ-২ বা করোনাভাইরাসের ব্রাজিলীয় ধরন পি ১ তার পূর্বসূরী ভাইরাসের তুলনায় অনেক বেশি সংক্রামক ও প্রাণঘাতী।

পি ১ ধরনটি এতটাই মারাত্মক যে, সার্স-কোভ-২ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সেরে উঠেছেন, এমন ব্যক্তিরাও খুব সহজে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ও মারা যেতে পারেন।

এ পর্যন্ত ব্রাজিলে করোনা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ২ কোটি ৮০ লাখ মানুষ, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৩ শতাংশ। টিকার দিতীয় ডোজ নিয়েছেন আরো কমসংখ্যক মানুষ— মাত্র ১ কোটি ২৭ লাখ।

বর্তমানে করোনা টিকার সংকট চলছে ব্রাজিলে। দেশটির ২৭ টি প্রদেশের ১৪ টি শহরে বর্তমানে টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ আছে টিকার ডোজের ঘাটতির কারণে।

ব্রাজিলে সংক্রমণের এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোকেও দায়ী করেন অনেকে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ— করোনা সংক্রমণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বরাবরই ইচ্ছাকৃতভাবে অবহেলা ও গাফিলতি দেখিয়ে গেছেন তিনি।

বুধবার ব্রাজিলের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেট জানিয়েছে, বলসোনারোর এই অবহেলা ও গাফিলতি প্রদর্শনের পেছনে কোনো অপরাধমূলক অভিপ্রায় ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি করা হয়েছে এবং সেই কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে।

সূত্র: এএফপি

এসএমডব্লিউ