পড়াশোনার পাঠ শেষ হয়নি। প্রশিক্ষণ চলছে। কিন্তু ভারতের রাজধানী শহর নয়াদিল্লির একটি হাসপাতালে তার নজরদারিতে চলছে করোনার চিকিৎসা। নাম রোহান আগারওয়াল। ভারতের অন্যতম সেরা হাসপাতালগুলোর একটি ‘হোলি ফ্যামিলি’ হাসপাতালে এখন কে মরবেন আর কাকে বাঁচিয়ে রাখবেন- সেই সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে ২৬ বছর বয়সী ইন্টার্ন চিকিৎসক রোহানকে।

অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা কোনো রোগীকে চোখের সামনে পড়ে থাকতে দেখেও অনেক সময় কিছু করার থাকছে না তার। হাসপাতালে শয্যা ও অক্সিজেন কিছুই খালি নেই। হাসপাতাল চত্বরজুড়ে করোনা আক্রান্তদের পরিবারের ভিড়। অধিকাংশই নিরুপায়।

ওই হাসপাতালটির স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে রোগী ও তাদের পরিবার প্রত্যেকেই জানেন যে হাসপাতালে পর্যাপ্ত শয্যা নেই। অক্সিজেন ও ভেন্টিলেটরের অভাব। হাসপাতালের যেখানে বর্জ্য ফেলা হয়, সেখানে রোগীকে মাটিতে শুয়ে কাতরানোর ছবিও দেখা গেছে।

দিল্লির হাসপাতালে কোভিড-যুদ্ধের লড়াইয়ে তরুণ চিকিৎসক রোহান

শিক্ষানবিশ চিকিৎসক রোহান নিজেও জানেন না যে, তিনি কোভিড আক্রান্ত হলে এ হাসপাতালে শয্যা পাবেন কি না। গত জানুয়ারিতে কোভিড-যোদ্ধাদের টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছিল দেশজুড়ে। সেই সময়ে তিনি অসুস্থ থাকায় টিকা নেওয়া হয়ে ওঠেনি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে রোহান বলেন, ‘করোনাভাইরাস চলে গেছে, এই ধারণাই আমাদের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনল। পরিস্থিতি এমন যে কাকে বাঁচানো যাবে আর কাকে যাবে না, তা ঈশ্বর ঠিক করে দিলেও আমাদেরকে এখন এমন একটা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।’

টানা ২৭ ঘন্টাও কাজ করতে হয় রোহানকে। সারা দিনের কাজের পর তিনি রাতে যখন ঘুমাতে যান, তখনও যেন শুনতে পান মনিটরে হৃদস্পন্দনের শব্দ। তার তত্ত্বাবধানে যারা মারা গিয়েছেন, তাদের ভুলতে পারেন না তিনি। চেষ্টায় কোনও খামতি ছিল না। কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই হাসপাতালে। কোন রোগীর আগে চিকিৎসা করবেন, তা নিয়ে সর্বক্ষণ তার ভেতরে দ্বন্দ্ব চলতে থাকে। 

রোহান বলছেন, ‘কোনো রোগীর হয়তো জ্বর হয়েছে। আমি জানি তিনি অসুস্থ। কিন্তু তার অক্সিজেনের প্রয়োজন নেই বলে তাকে ভর্তি করতে পারি না। করোনায় আক্রান্ত একজন বৃদ্ধ ও একজন যুবকের মধ্যে কাকে ভর্তি নেব, বুঝতে পারি না। তাদের দু’জনেরই হয়তো অক্সিজেন প্রয়োজন, কিন্তু শয্যা একটাই।’

হাসপাতালের এমন পরিবেশ দেখে হতাশাগ্রস্ত এই তরুণ চিকিৎসক আরও বলছেন, ‘মাঝে মাঝে তো ঘণ্টাখানেকের জন্য হলেও একটু বাইরে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু যাই না। কারণ আমি জানি, আমাকে এখন টানা ২৪ ঘণ্টা ওই হাসপাতালেই থাকতে হবে।’

এএস/জেএস