গত কয়েকদিন ধরে সংঘাত-সহিংসতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা ও ইসরায়েল। কিন্তু এর মধ্যেই ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের নামাজে হাজির হয়েছেন হাজার হাজার মুসলিম। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

বুধবার মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় ওই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের মতো ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলেও ঈদ আজ, বৃহস্পতিবার। সেই ঈদের নামাজে যোগ দিতেই আসেন মুসল্লিরা।

গত সপ্তাহের রোববার (৯ মে) থেকে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে যে সংঘাত দেখা দিয়েছে, তার সূত্রপাত হয়েছিল এই আল-আকসা মসজিদ চত্বর থেকেই। ৯ মে ছিল ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র রাত শবে কদর (লায়লাতুল কদর)। জেরুজালেমে ইসরায়েলের দখলদারিত্বে প্রতিবাদ করতে ওই দিনটিই বেছে নিয়েছিলেন হামাসপন্থি ফিলিস্তিনিরা।

৯ মে রাতে আল-আকসায় নামাজ আদায় শেষে মসজিদ চত্বরে ফিলিস্তিনি মুসল্লিরা বিক্ষোভ শুরু করলে তা দমাতে তৎপর হয়ে ওঠে ইসরায়েলের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময় বিক্ষোভকারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যকার সংঘাতে আহত হন অন্তত ৯০ জন ফিলিস্তিনি। সংঘাতের পর থেকে আল আকসা মসজিদ ও এর সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রেখেছিল ইসরায়েলি পুলিশ।

এর জেরে ফিলিস্তিনের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল হামাস হুমকি দেয় ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন সরকারকে। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, ১০ মে সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে মসজিদ চত্বর থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহার না করা হলে তার পরিণতির জন্য ইসরায়েল সরকার দায়ী থাকবে।

কিন্তু ইসরায়েলের সরকার এই হুমকিকে আমল না দেওয়ায় ১০ মে সন্ধ্যার পর গাজা থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে রকেট হামলা শুরু করে হামাস। সেই হামলা এখনও অব্যাহত আছে। ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপি বলছে, সোমবার থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে দেড় হাজারের বেশি রকেট নিক্ষেপ করেছে হামাস।

হামাসের রকেট হামলায় ইসলায়েলে এ পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ইসরায়েলের রাষ্ট্রায়ত্ব একটি জ্বালানি কোম্পানির পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই পাইপলাইনে রকেট আঘাত হানার পর আগুন ধরে যায়।

এদিকে, হামাস রকেট হামলা শুরু করার অল্প কিছু সময় পর থেকেই গাজায় ফিলিস্তিনি ঘণবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো লক্ষ্য করে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় এ পর্যন্ত গাজায় মারা গেছেন ৬৯ জন, যাদের মধ্যে ১৭ জন শিশু ও ৮ জন নারী আছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন চার শতাধিক।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের সাম্প্রতিক এই সহিংসতা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে  জাতিসংঘসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এই সংঘাতের বিবদমান দু’পক্ষ— ফিলিস্তিনের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল হামাস ও ইসরায়েল সেনাবাহিনীকে যুদ্ধ বিরতির আহ্বানও জানানো হয়েছে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়গুলোর পক্ষ থেকে। তবে কোনো পক্ষেরই যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার ইচ্ছা এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।

সূত্র: আল জাজিরা।

এসএমডব্লিউ