মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলীয় একটি শহরে পুলিশ স্টেশনে হামলা চালিয়ে অন্তত ১৩ জনকে হত্যা করেছেন দেশটির সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী স্থানীয় সশস্ত্র বিদ্রোহী একটি গোষ্ঠীর যোদ্ধারা। একই সঙ্গে পুলিশের আরও চার সদস্যকে জিম্মি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তারা।

রোববার দেশটির পূর্বাঞ্চলের মোবি শহরের একটি পুলিশ স্টেশনে এই হামলার ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, হামলার পর মোবির ওই পুলিশ স্টেশনে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মরদেহ পড়ে আছে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) সরকারকে উৎখাত করে সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আসার পর দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো অভ্যুত্থানবিরোধী জনগণের আন্দোলনে সমর্থন এবং সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দেয়। মোবি শহরে এই হামলা বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সেই প্রতিশ্রুতির অংশ বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

রোববার ভোরের দিকে চীন সীমান্ত লাগোয়া মোবিতে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাও ঘটেছে। এর আগে, শনিবার ভারত সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের একটি জেড খনিসমৃদ্ধ শহরেও জাতিগত সশস্ত্র একটি গোষ্ঠী হামলা চালিয়েছে।

মোবির ভিডিওতে দেখা যায়, যেসব মরদেহ পড়ে আছে, তাদের পরনে নিরাপত্তা বাহিনীর ইউনিফর্ম। ভিডিওতে বিদ্রোহীদের হাতে জিম্মি চারজনকে পুলিশ সদস্য হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে শোনা যায়। এ সময় তাদের হাত পেছনের দিকে বাধা এবং সার্জিক্যাল মাস্কে চোখ ঢেকে রাখা ছিল।

ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি গাড়ি আগুনে পুড়তে দেখা যায়। এ সময় পাশেই কয়েক ডজন বিদ্রোহী দাঁড়িয়ে ছিলেন। তবে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স সর্বশেষ এই সংঘাতের ব্যাপারে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের মুখপাত্রের মন্তব্য জানতে পারেনি। এছাড়া ওই ভিডিও অথবা মোবি শহরে বিদ্রোহীদের হামলার তথ্যের সত্যতাও যাচাই করতে পারেনি।

থাইল্যান্ডভিত্তিক মিয়ানমারের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইরাবতিকে বিদ্রোহী গোষ্ঠী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের এক যোদ্ধা বলেছেন, পুলিশ স্টেশন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং সংঘর্ষে দু’জন বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন। অন্যান্য স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ১৫ সদস্য নিহত হয়েছেন। 

রাজধানী নেইপিদো থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পূর্বাঞ্চলে মোবি শহরের অবস্থান। গত কয়েক দশক ধরে অধিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াইরত মিয়ানমারের বেশ কয়েকটি জাতিগত সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডের পাশের শহর মোবি।

মিয়ানমারের গণমাধ্যম বলছে, রোববার ভোরের দিকে চীনে যাওয়ার অন্যতম সীমান্ত শহর মিউসে অভ্যুত্থানবিরোধী অন্তত চারটি স্থানীয় জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত জোটের সদস্যদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়েছে।
 
চাকরি হারালেন লাখো শিক্ষক

এদিকে, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় দেশটির এক লাখ ২৫ হাজারের বেশি শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে। মিয়ানমার টিচার্স ফেডারেশনের এক কর্মকর্তা সেনা সরকার এই শিক্ষকদের বরখাস্ত করেছে বলে জানিয়েছেন।

মিয়ানমারের স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস বলেছে, গত ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর নিরাপত্তা বাহিনী এখন পর্যন্ত অন্তত ৮১৫ জন সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। তবে দেশটির জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লেইং এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। শনিবার দেশটির সরকারি টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেছেন, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা ৩০০ জন। তবে পুলিশের ৪৭ সদস্যও নিহত হয়েছেন।

অভ্যুত্থানের পর দেশটির নেত্রী অং সান সু চি-সহ (৭৫) প্রায় সাড়ে হাজার মানুষকে আটক করেছে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী। গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীরা অবিলম্বে বন্দিদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।

মিন অং হ্লেইং বলেছেন, অং সান সু চি সুস্থ আছেন। শিগগিরই তাকে আদালতে তোলা হবে। অবৈধভাবে আমদানির পর ওয়াকিটকি ব্যবহার এবং করোনা মহামারিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন লঙ্ঘন-সহ সু চির বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ এনেছে জান্তা সরকার। আগামী সোমবার তার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগের বিষয়ে পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। সেদিনই তাকে দেখা যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত বছরের নভেম্বরে মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে। কিন্তু সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়।

গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সু চিকে গৃহবন্দি এবং দেশের শাসন ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণে নেয় সেনাবাহিনী। নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ অস্বীকারকারী তৎকালীন মিয়ানমারের নির্বাচন কমিশনের কয়েক ডজন কর্মকর্তা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

এসএস