ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের জেরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ওডিশার সমুদ্র উপকূলাবর্তী এলাকাগুলো থেকে ২০ লাখেরও বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ১১ লাখ ও ওডিশায় প্রায় ১০ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে দুই রাজ্যের সরকার।

এছাড়া বুধবার সকাল সাড়ে আটটা রাত পৌনে আট টা পর্যন্ত থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে সবগুলো ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। ওডিশার রাজধানী ভূবনেশ্বর বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছিল মঙ্গলবার রাত ১১ টার দিকেই। আগামী কাল বিকেল ৫ টা পর্যন্ত উড়োজাহাজ ওঠানামা বন্ধ থাকবে ভূবনেশ্বর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এখনো স্থলভাগে এসে না পৌঁছালেও এর প্রভাবে শুরু হওয়া প্রবল ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাতে ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গে মারা গেছেন ৩ জন। এদের মধ্যে দুইজন মারা গেছেন বজ্রপাতে এবং একজন অতিবৃষ্টির ফলে দেয়াল ধ্বসে মারা গেছেন একজন।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, সাইক্লোন ইয়াস ও পূর্ণিমার প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারের ফলে দীঘা ও সুন্দরবন এলাকায় বর্তমানে বিপদসীমার অনেক ওপরে আছে বঙ্গোপসাগর।

এদিকে, ঝড়ের প্রভাবে ওডিশার উপকূলীয় এলাকার জেলাগুলোতে করোনা পরিস্থিতি গুরুতর রূপ নিতে পারে বলে শঙ্কা করছেন ওডিশা রাজ্য সরকারের কর্মকর্তারা। ওডিশার বালেশ্বর জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিশাল দেব, ‘করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এই মুহূর্তে যে পরিমাণ জায়গা আছে, তার অন্তত দ্বিগুন জায়গা দরকার। কিন্তু তা সম্ভব না হওয়ায় ঝড়ের পর করোনা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতির শঙ্কা রয়েছে।’

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ওডিশা রাজ্যের অভিমুখে প্রবল গতিতে ধেয়ে আসছে ইয়াস। এই দুই রাজ্যের বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে বুধবার সকাল থেকেই দাপট দেখাতে শুরু করেছে ঘূর্ণিঝড়।

পশ্চিমবঙ্গের দিঘায় ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে প্রবল জলোচ্ছ্বাস। সমুদ্রের অবস্থা উত্তাল। দিঘার গার্ডওয়াল টপকে ঢুকছে সমুদ্রের পানি। পানি ঢুকছে মন্দারমণিতে। সেখানকার সমুদ্র সংলগ্ন দোকানসহ কয়েকটি হোটেলেও পানি ঢুকেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের ১০টি জেলায় সেনা নামানো হয়েছে।

ভারতের আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এই মুহূর্তে দিঘা থেকে ৮০ কিমি দূরে রয়েছে। ওডিশার ধামরা থেকে এই মুহূর্তে ৪০ কিলোমিটার ও বালেশ্বর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়।

সকালেই ইয়াস আছড়ে পড়তে চলেছে ধামরা ও বালেশ্বরের মাঝামাঝি স্থলভূমিতে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৩০-১৪০ কিলোমিটার। সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার।

আবহাওয়া দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ওডিশার বেশিরাভাগ এলাকায় ভারী বৃষ্টি ও ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হওয়া বয়ে যাবে। এছাড়া উপকূলবর্তী এলাকায় জলোচ্ছাসের সময় সেখানে সমুদ্রের ঢেউয়ের উচ্চতা হতে পারে ২ থেকে ৪ মিটার পর্যন্ত।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

এসএমডব্লিউ