১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডায় সংঘটিত গণহত্যায় ফ্রান্সের দায়ের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। রুয়ান্ডা সফররত ম্যাক্রোঁ ওই গণহত্যায় নিজ দেশের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাইলেও আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।

বৃহস্পতিবার রুয়ান্ডায় কিগালি জেনোসাইড মেমোরিয়ালে দেওয়া এক বক্তৃতায় গণহত্যা চালানো রুয়ান্ডার তৎকালীন সরকারকে সমর্থন দেওয়া ও গণহত্যার আশঙ্কা সংক্রান্ত সতর্কতা পাওয়া সত্ত্বেও ফ্রান্স তা উপেক্ষা করেছে বলে স্বীকার করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ।

বক্তৃতায় ম্যাক্রোঁ বলেন, ‌‘আজ এখানে দাঁড়িয়ে, মানবিকতা ও সম্মানের সঙ্গে আপনাদের পাশে থেকে আমি আমাদের দায় স্বীকার করতে এসেছি। আমি স্বীকার করছি গণহত্যার হুঁশিয়ারিতে কান দেয়নি প্যারিস। তবে ওই গণহত্যায় কোনও ধরনের সহায়তাও করেনি ফ্রান্স।’

২০১০ সালের পর ম্যাক্রোঁই ফ্রান্সের প্রথম রাষ্ট্রনেতা যিনি পূর্ব আফ্রিকার দেশটি সফর করছেন। রুয়ান্ডায় সংঘঠিত ওই গণহত্যার জন্য দীর্ঘদিন ধরে ফ্রান্সের দায় নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। তবে এর আগে কখনো কোনো ফরাসি নেতা স্বীকার করে বক্তব্য দেয়নি।

ফ্রান্স ‘গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল না’ জানিয়ে ম্যাক্রোঁ বলেন, ‌‘তবে ফ্রান্সের ভূমিকা ছিল। আর এ দায়টা হলো রাজনৈতিক।’ গণহত্যায় বেঁচে যাওয়া সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি এ সময় বলেন, ‘তারা চাইলে হয়তো আমাদেরকে ক্ষমা উপহার দিতে পারেন।’

১০০ দিনে প্রাণ হারিয়েছিল রুয়ান্ডার প্রায় ৮ লাখ মানুষ।

রুয়ান্ডা গণহত্যা

১৯৯৪ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ১০০ দিনের মধ্যে প্রাণ হারিয়েছিল রুয়ান্ডার প্রায় ৮ লাখ মানুষ। ২৫ বছর আগে শুরু গণহত্যার শিকার অধিকাংশই ছিল সংখ্যালঘু তুতসি সম্প্রদায়ের। গণহত্যা চালিয়েছিল হুতু সম্প্রদায়। যদিও তখন রুয়ান্ডাতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ছিল, কিন্তু তারপরও এত অল্প সময়ে বিশালসংখ্যক মানুষকে হত্যা করার কথা চিন্তা করাও ছিল কল্পনাতীত।

দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা তুতসিরা হুতুদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষও ছিল। ৮৫ শতাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার হুতুরা ১৯৫৯ সালে তুতসি রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করে। তখন হাজারো তুতসি প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে যায়। ২০০৩ সাল পর্যন্ত চলা গণহত্যায় প্রায় ৫০ লাখ মানুষ মারা গেছে। 

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রতিষ্ঠা হয়েছে ২০০২ সালে। এর অনেক আগে রুয়ান্ডার গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে। ফলে, এ জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করতে পারবেন না এই আদালত। তবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ওই হত্যাযজ্ঞের শীর্ষ ব্যক্তিদের বিচারের জন্য তানজানিয়ার আরশা শহরে একটি আদালত স্থাপন করেছে। এ আদালতের নাম ‘রুয়ান্ডার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত’। 

দীর্ঘ এবং ব্যয়বহুল বিচারের পর গণহত্যার জন্য এখন পর্যন্ত ৯৩ জনের বিচার হয়েছে। এদের অনেকেই হুতু সরকারের আমলের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ছিলেন। সবাই হুতু সম্প্রদায়ের। গণহত্যায় অভিযুক্ত লাখো মানুষের বিচার দ্রুত করার জন্য রুয়ান্ডা সামাজিক আদালত তৈরি করেছে। এর নাম গাসাসা। বিচার শুরু হওয়ার আগেই অন্তত ১০ হাজার অভিযুক্ত ব্যক্তি কারাগারে মারা গেছেন।

এএস