প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগটিকে অবশেষে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করল দিল্লি। বৃহস্পতিবার সেখানে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত ১৫৩ জন রোগী শনাক্তের পরই এই ঘোষণা দেন দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর অনিল বাইজাল। এ বিষয়ক কিছু নির্দেশনাও জারি করা হয়েছে দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নরের কার্যালয় থেকে।

সে সব নির্দেশনা অনুযায়ী, দিল্লির সরকারি–বেসরকারি সব স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত ও চিকিৎসার জন্য রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার ও ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের জারি করা নির্দেশিকা মেনে চলবে। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত ও সন্দেহভাজন প্রতিটি ঘটনা দিল্লির সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরের অন্তর্ভুক্ত স্বাস্থ্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ঘোষণা করবে।

ভারতের মহামারি রোগ আইন ১৮৯৭ এর আওতায় জারি করা নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি দিল্লিতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকরমাইসিস রোগ বা এ রোগে আক্রান্তদের বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করতে চান, সেক্ষেত্রে অবশ্যই ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমতি নিতে হবে।

যদি এর ব্যত্যয় ঘটে সেক্ষেত্রে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবে দিল্লির রাজ্য সরকার।

সম্প্রতি দিল্লিতে বাড়ছে মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানান, এর আগ পর্যন্ত দিল্লিতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৬২০ জন। বৃহস্পতিবার এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৭৩ জনে।

মিউকরমাইসিটিস নামে এক ধরনের ছত্রাকের কারণে ঘটে থাকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকরমাইকোসিস রোগটি। ভাইরাসটি আমাদের আশপাশের পরিবেশেই থাকে, তবে সবাই এই ছত্রাকটির শিকার হবেন, ব্যাপারটি এমন নয়। মিউকরমাইসিটিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের শিকার হন সাধারণত সেই সব ব্যক্তি যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সাধারণ লেভেল বা স্তরের অনেক নিচে এবং যাদের রক্তে উচ্চ মাত্রার শর্করা বা ডায়াবেটিস প্রবণতা আছে।  

করোনা চিকিৎসার সঙ্গে এই রোগটির সম্পর্ক হলো— করোনায় আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় স্টেরয়েড ব্যবহৃত হয়। স্টেরয়েড করোনায় আক্রান্ত রোগীর ফুসফুসের প্রদাহ উপশমসহ অন্যান্য কিছু সুবিধা দিলেও মাত্রাতিরিক্ত স্টেরয়েডের ব্যবহার রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্তের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস মূলত মানুষের নাসারন্ধ্র, ফুসফুস এবং মস্তিষ্ককে আক্রমণ করে। এ রোগে আক্রান্ত রোগীর মুখের একপাশ ফুলে যাওয়া, তীব্র মাথা ব্যথা, চোখ ফোলা, মুখের নাক বা মুখের ওপরের দিকে কালো ক্ষত, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দেয়।

রোগটি যদিও ছোঁয়াচে নয়, তবে করোনার কারণে আক্রান্ত রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া ও এই রোগের চিকিৎসা প্রক্রিয়ার কারণে এতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে ভারতে। এই রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। শতকরা ৫৪ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে থাকে এই শঙ্কা।

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারতে দিন দিন বেড়েই চলেছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের দৌরাত্ম্য। এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, ভারতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে  ১১ হাজার ৭১৭ জন ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগী হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দেখা যাচ্ছে দেশটির গুজরাট রাজ্যে। সেখানে বর্তমানে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৮৫৯ জন। তারপরই আছে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্র। সেখানে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭৭০ জন; আর এই তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য অন্ধ্রে এ পর্যন্ত ৭৬৮ জন শনাক্তের খবর পাওয়া গেছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সব রাজ্যকেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে মহামারি রোগ হিসেবে ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছে। পাশপাশি প্রতিটি ঘটনা তদারকির জন্য রাজ্যগুলোর স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে।

সূত্র: এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টুডে

এসএমডব্লিউ