আগামী ৭ জুন থেকে জার্মানিতে ১২ কিংবা তার বেশি বয়সীরা কোভিড-১৯ টিকার জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে নানা কারণেই জার্মান সরকারের নেওয়া এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশটিতে সমালোচনার ঝড় উঠছে। এই খবর জানিয়েছে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে।

দেশটির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার জার্মানির ফেডারেল ও রাজ্য সরকারগুলো নেওয়া এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছেন। প্রাপ্তবয়স্কদের মতো কিশোরদের ক্ষেত্রেও টিকা বাধ্যতামূলক করা না করা হলেও বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধছে।

প্রথমত; ফাইজার-বায়োনটেক টিকা আদৌ কিশোরদের জন্য উপযুক্ত কিনা, সে বিষয়ে দ্বন্দ্ব দূর হয়নি। শুক্রবার ইউরোপীয় ওষুধ সংক্রান্ত দফতর সেই ছাড়পত্র দেওয়ার আগেই জার্মানি রাজনৈতিক স্তরে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো। 

সরকার অবশ্য সেই অনুমোদনের শর্তেই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। জার্মানির নিজস্ব স্থায়ী টিকা কমিশনও আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে নিজস্ব অবস্থান জানাবে। এই টিকা কিশোরদের জন্য আদৌ নিরাপদ কিনা, যথেষ্ট তথ্যের অভাবে সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করছে কমিশন।

শিশু-কিশোরদের মধ্যে করোনা তেমন তীব্র প্রতিক্রিয়া না দেখানো সত্ত্বেও তড়িঘড়ি করে টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত তাই সমালোচনার মুখেই পড়ছে। গ্রীষ্মকালীন ছুটির পর স্কুলে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার তাগিদে এমন ‘হঠকারী’ পদক্ষেপ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছে কিছু মহল। বৈজ্ঞানিক কারণের বদলে সরকার সাংগঠনিক দুশ্চিন্তাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে।

দ্বিতীয়ত; জার্মানিতে টিকার জোগান নিয়েও সমস্যা দেখা যাচ্ছে। ধাপে ধাপে শুধু উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা গোষ্ঠীগুলির জন্যই করোনা টিকার ব্যবস্থা করে যথেষ্ট সুফল পাওয়া যাচ্ছে। টিকাদান কর্মসূচিতে যথেষ্ট গতি এসেছে। ৪০ শতাংশের বেশি মানুষ টিকার প্রথম ডোজ ও প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষ দুটি ডোজই পেয়ে গেছেন। তবে অধিকার সত্ত্বেও অনেক মানুষ এখনো আবেদন করেও অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাচ্ছেন না।

রাজ্যগুলোর মধ্যে টিকার বণ্টন নিয়েও ক্ষোভ বাড়ছে। ৭ জুন থেকে সবাই টিকার জন্য আবেদনের সুযোগ পেলে চাপ আরও বেড়ে যাবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান। অথচ বাড়তি টিকার সরবরাহ নিশ্চিত না করেই তিনি কিশোরদের জন্যও টিকার ছাড়পত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ফলে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ফারাক আরেও বেড়ে যাবে এবং প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে কিশোররা শুধু আবেদন করে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে বাধ্য হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল কিশোরদের টিকা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশয় মেনে নিয়ে বলেছেন, শিশুদের টিকার বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল। তবে টিকা না নিলেও স্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রতি কোনো বৈষম্য করা হবে না। বরং স্কুলের পরিবেশ করোনামুক্ত রাখার উদ্যোগের উপর বেশি জোর দেওয়া হবে।

করোনা পরক্ষার নিয়মে কোনো পরিবর্তন করা হবে না। ফলে কিশোররা টিকা ছাড়াই তাদের বাবা-মার সঙ্গে ছুটি কাটাতে ভ্রমণও করতে পারবে। মেরকেল আরেও বলেন, যেসব কিশোরের নির্দিষ্ট কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে, টিকার ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

এএস