করোনার উৎস তদন্তে এবার চীনের পাশে দাঁড়াল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটির জরুরি অবস্থা বিষয়ক শীর্ষ বিশেষজ্ঞ মাইক রায়ান সম্প্রতি করোনার উৎস বিষয়ক তদন্তকে রাজনীতির আওতার বাইরে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

শনিবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মাইক রায়ান বলেন, ‘আমরা সবাইকে একান্তভাবে অনুরোধ জানাব, বিজ্ঞানের একটি বিষয়কে যেন রাজনীতির সঙ্গে না মেশানো হয়। এই ভাইরাসের উৎস অনুসন্ধানের গোটা প্রক্রিয়াটিকেই রাজনীতি বিষাক্ত করে ফেলেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি মুক্ত বিশ্বে বসবাস করি। এখানে সব দেশই এই ভাইরাসটির উৎস বিষয়ে নিজেদের মতামত জানাতে পারে। তবে ডব্লিউএইচও কোনো নির্দিষ্ট দেশের সংস্থা নয়। এ কারণে যে কোনো বিষয়ে কোনো তত্ত্ব যখন বেশিরভাগ ডব্লিউএইচওর বেশিরভাগ দেশ মেনে নেয়, সেটিই গ্রহণ করে ডব্লিউএইচও।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ডব্লিউএইচওর অপর বিশেষজ্ঞ মারিয়া ভ্যান কারকোভ বলেন, এই ভাইরাসটির উৎস তদন্তে আরও কয়েকটি মিশন পরিচালনা করতে হবে এবং এই ব্যাপারটি বেশ সময়সাপেক্ষ।

চীনের উহান শহর, বিশ্বে প্রথম যেখানে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়, চলতি বছর মার্চে ডব্লিউএইচওর বিশেষজ্ঞ দল সেখানে করোনাভাইরাসের উৎস তদন্তে গিয়েছিল। চার সপ্তাহ উহানে অবস্থানের পর ফিরে এসে এ বিষয়ক প্রতিবেদনও জমা দিয়েছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাদুড় কিংবা প্যাঙ্গোলিন বা এই জাতীয় কোনো বন্য প্রাণী থেকেই মানবদেহে সংক্রমিত হয়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটি। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ তখন এই মর্মে আপত্তি জানিয়েছিল যে প্রতিবেদনটি অসম্পূর্ণ।

গত ২৬ মে ‍যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন করোনাভাইরাসের উৎস সম্পর্কে একটি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেন।

হোয়াইট হাউস থেকে এ বিষয়ক এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস কোনো আক্রান্ত প্রাণীর দেহ থেকে মানবদেহে ছড়িয়েছে, না কি গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে—এ প্রশ্নের মিমাংসা এখনও হয়নি; এবং এ জন্যই এই ভাইরাসটির উদ্ভব সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রয়োজন।

প্রতিবেদন প্রস্তুতের ৯০ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। পরে এক বার্তায় জো বাইডেন বলেন, ‘করোনাভাইরাসের উদ্ভব সম্পর্কে দুইটি তত্ত্ব বর্তমানে প্রচলিত। কিন্তু এই দুই তত্ত্বের মধ্যে কোনটি সঠিক তা এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিশ্চিত করতে পারেনি।’

‘আমি এখন গোয়েন্দাদেরকে দ্বিগুন চেষ্টা চালিয়ে তথ্য সংগ্রহ এবং তা বিশ্লেষণের অনুরোধ জানাচ্ছি, যার মাধ্যমে একটি সুনির্দিষ্ট উপসংহারে পৌঁছনো যায় এবং এ ব্যাপারে ৯০ দিনের মধ্যে আমাকে প্রতিবেদন দিন।’

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্দেশ দেওয়ার পরই এর প্রতিক্রিয়ায় দেশটির চীন দূতাবাস অভিযোগ করে, প্রাণঘাতী এই ব্যাধিটিকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে।

এ বিষয়ক এক বিবৃতিতে বৃহস্পতিবার দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘চীন সবসময়েই করোনাভাইরাস সম্পর্কে একটি বিস্তৃত গবেষণাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। তবে এখান শঙ্কার ব্যাপার হলো এই যে, রাজনৈতিক কারসাজি ও দোষারোপের খেলা এ রকম একটি স্পর্ষকাতর বিষয়ের তদন্তকাজকে বাধাগ্রস্ত করবে।’

সূত্র: রয়টার্স

এসএমডব্লিউ