ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধের জেরে বিপাকে পড়েছিলেন রাজ্যটির মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার সকাল দশটায় রাজধানী দিল্লিতে গিয়ে তাকে দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু মমতা তাকে ছাড়েননি। আলাপনও দিল্লি যাননি। পরে অবসর নেওয়ার কথা জানানোর পর আলাপনকে নিজের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন মমতা।

এর আগে অবশ্য আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে মঙ্গলবার দিল্লিতে গিয়ে দায়িত্ব নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল মোদি সরকার। কিন্তু আলাপন ততক্ষণে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আগামী তিন বছর আলাপন তার প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন।

অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের নতুন মুখ্যসচিব হয়েছেন হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। এমনিতে আলাপনের সোমবারই অবসর নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা ও ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য মমতা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তিন মাস চাকরি বৃদ্ধির আবেদন করেন। নরেন্দ্র মোদির সরকার তাতে রাজিও হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে যোগ না দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার তাকে বদলি করে দেয়।

এরপরেও অবশ্য আলাপনকে শো কজ করা হয়েছে। ডাকা সত্ত্বেও কেন তিনি ইয়াসের ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে যোগ দেননি, তার কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। তিনদিনের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে।

সাবেক শীর্ষ আমলাদের বড় অংশের মত হলো, আলাপনকে শাস্তি দিতে পারবে না কেন্দ্রীয় সরকার। সাবেক কেন্দ্রীয় সচিব জহর সরকারের মতে, ‘কেন্দ্রীয় সরকার আর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে না। যেহেতু যথাসময়ে রাজ্য সরকার আলাপনকে ছাড়েনি, তাই তার পক্ষে সরকারি কর্মজীবনের শেষদিনে দিল্লিতে যোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা মোদি সরকার নিতে পারবে না।’

তিনি আরও জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আইনসঙ্গতভাবেই তাকে মুখ্য উপদেষ্টার পদে নিয়োগ করেছেন।

সাবেক মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানিয়েছেন, ‘আলাপন ঠিক কাজ করেছে। আলাপন আইন ভাঙেননি। তাই তার বিরুদ্ধে কেন্দ্র কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না।’

অন্যদিকে মমতা বলেছেন, ‘আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বিতীয় চিঠি আসার আগেই অবসর নিয়েছেন। ইতিহাসে তার নাম লেখা থাকবে। তিনি এতদিন ধরে দেশের হয়ে কাজ করেছেন, কিন্তু অবসরের মুহূর্তে এসে তার সঙ্গে যা করা হল তা ঠিক নয়।’

মমতার দাবি, ‘এমন নির্দয় ও নির্মম প্রধানমন্ত্রী দেখিনি। আমাকে পছন্দ করেন না বলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে এটা করলেন।’

টিএম