ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। ফোনালাপে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে থাকা করোনার উদ্বৃত্ত টিকা বণ্টন নিয়ে আলোচনা ছাড়াও ভারত-মার্কিন সম্পর্ক জোরদার করা নিয়ে কথা বলেন উভয় নেতা। ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকেই এই ফোনটি করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে দেশটির বার্তাসংস্থা এএনআই।

দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে ঠিক কী নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে, সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট ভাবে কিছু জানা যায়নি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের হাতে থাকা উদ্বৃত্ত কোভিড টিকা অন্য দেশে পাঠানোর কথা ঘোষণা করেছে বাইডেন প্রশাসন। বিভিন্ন দেশে টিকা সরবরাহ করার ‘কোভ্যাক্স’ নামের যে প্রকল্প চালু করেছে জাতিসংঘ, সেই প্রকল্পের মাধ্যমেই দেশটির হাতে থাকা উদ্বৃত্ত টিকার ৭৫ শতাংশ অন্য দেশে পাঠানো হবে জানিয়েছে বাইডেন-হ্যারিস সরকার।

সেই টিকার একটি অংশ পাবে ভারতও। সে বিষয়েই মোদির সঙ্গে কমলা হ্যারিসের কথা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।

হোয়াইট হাউসের সিনিয়র উপদেষ্টা ও মুখপাত্র সাইমন স্যান্ডার্স জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে জরুরি পরিস্থিতিতে বহু দেশকেই টিকা দিয়ে সাহায্য করছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলার সময় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মূলত এটাই জানিয়েছেন। এর আগেই বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, উদ্বৃত্ত ৭৫ শতাংশ কোভাক্সিন জাতিসংঘের সহায়তায় সারা বিশ্বে বণ্টন করতে চায় তারা। সব মিলিয়ে আড়াই কোটি ডোজ বণ্টন করবে দেশটি।

মোদি সরকারের আশা, মার্কিন সহায়তায় ভারতও প্রচুর পরিমাণে টিকা আমদানি করতে পারবে।

প্রসঙ্গত, গত মাসেই যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন ভারতের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে দেশটি সফর করেন তিনি। দু’দিনের সফরে তিনি মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে জয়শঙ্কর জানিয়েছিলেন, আলোচনার মূল ফোকাসই ছিল মহামারি মোকাবিলা ও টিকা সংক্রান্ত।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার মোদি ছাড়াও মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু ম্যানুয়েল লোপেজ, গুয়াতেমালার প্রেসিডেন্ট আলেজান্দ্রো গিয়াম্মাতেরির সঙ্গেও ফোন করে কথা বলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট। এছাড়াও ক্যারিবিয়ান কমিউনিটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী কিথ রোলের সঙ্গেও তিনি কথা বলেন।

এ প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কমলা হ্যারিস ওই সব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে আড়াই কোটি ভ্যাকসিনের ডোজ সংশ্লিষ্ট দেশগুলো ও অন্যদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। তবে জুনের মধ্যেই সব মিলিয়ে ৮ কোটি টিকার ডোজ বণ্টন করবে যুক্তরাষ্ট্র।

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক সকল ভারতীয়কে টিকা দিতে দরকার ১.৮৮ বিলিয়ন টিকা। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি থেকে ভারতে শুরু হয়েছে টিকা প্রয়োগ। সরকারি নথি বলছে, এখনও পর্যন্ত ৮৯ শতাংশ মানুষ করোনা টিকার বাইরে রয়েছে। অর্থাৎ ডিসেম্বরের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে জুন থেকে মাসে অন্তত ২৩৮ মিলিয়ন টিকার ডোজ উৎপাদন করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি জুন মাস থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ছেলে মেয়ে ১৮ বছর পূর্ণ করবে। সেক্ষেত্রে দেশের ১৮ ঊর্ধ্ব জনগণের সংখ্যা আরও বাড়বে। সেই হিসেব অনুযায়ী, ডিসেম্বরের মধ্যে ১৮ বছরের বেশি বয়সী সকলকে টিকার দিতে হলে জুন থেকেই প্রতি মাসে ৩৫ দশমিক ৯ কোটি টিকার ডোজ লাগবে।

টিএম