২০২২ সাল শেষ হওয়ার আগেই বিশ্বের সব মানুষকে করোনা টিকার আওতায় আনতে বিশ্ব নেতাদের উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। বিশ্বের সম্পদশালী ৭ দেশের সংগঠন জি ৭-এর বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে প্রস্তাবনা দেবেন বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার বিবিসিকে বরিস জনসন বলেন, ‘বৈশ্বিক মহামারি থেকে মুক্তি পেতে হলে বিশ্বের সবাইকে, বা অধিকাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা ছাড়া আর কোনো উপায় আমাদের সামনে নেই। ২০২২ সাল শেষ হওয়ার আগেই আমরা এই কাজটি করতে পারি।’

‘সামনে জি ৭ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে আমি সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে এই আনুষ্ঠানিকভাবে এই আহ্বান জানাব। যদি আমরা এ কাজটি করতে পারি, সেক্ষেত্রে এটি হবে বিশ্ব মেডিকেল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘটনা।’

চলতি জুন মাসের ১১ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের কর্নওয়ালে অনুষ্ঠিত হবে জি ৭ সম্মেলন। মহামারি শুরুর পর এই প্রথম সম্মেলনে সশরীরে উপস্থিত থাকবেন সদস্য রাষ্ট্রগুলোর শাসনতান্ত্রিক প্রধানরা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছেও এই সম্মেলনটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে, কারণ দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এই প্রথম কোনো বহুজাতিক সম্মেলনে সশরীরে উপস্থিত থাকার কথা আছে তার।

২০২০ সালের মার্চে করোনাকে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ওই বছর নভেম্বর মাসে প্রথম বাজারে আসে ডব্লিউএইচও অনুমোদিত টিকা ফাইজার। তার আগেই অবশ্য রাশিয়ার করোনা টিকা স্পুটনিক ৫ বাজারে এসেছিল।

ফাইজার, মডার্না, ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকা বাজারে আসার পর ডিসেম্বর থেকেই যুক্তরাজ্য-জার্মানি-ফ্রান্স-যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারের উদ্যোগে শুরু হয় গণটিকাদান কর্মসূচি।

কিন্তু, উন্নত দেশগুলো টিকাদান কর্মসূচি শুরু করলেও টিকার ডোজের অভাবে সে সময় এই কর্মসূচি শুরু করতে পারেনি উন্নয়নশীল ও অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর দেশগুলো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, টিকার ডোজের অভাবে এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৩৫ টিরও বেশি দেশ এ বিষয়ক কোনো পরিকল্পনাই নিতে পারেনি।

এ অবস্থায় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোকে টিকা সহায়তা দিতে সমৃদ্ধ দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস। এ লক্ষ্যে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক টিকা বিতরণ সংস্থা গ্যাভি ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে কোভ্যাক্স ইনিশিয়েটিভ নামে একটি প্রকল্পও শুরু করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

জি ৭ এর সদস্য দেশগুলো— যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য , জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, কানাডা ও জাপান ইতোমধ্যে কোভ্যাক্স প্রকল্পে অর্থ ও টিকার ডোজ দিয়ে সহযোগিতা করেছে, এবং ভবিষ্যতে আরো টিকার ডোজ দেবে বলে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।

তবে জি ৭ এর সদস্যদেশগুলোর মধ্যে কোভ্যাক্সকে সবচেয়ে বেশি টিকার ডোজ দিয়েছে যুক্তরাজ্য। ডব্লিউএইচওর তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত এই প্রকল্পে ৮ কোটি ডোজ করোনা টিকা দিয়েছে দেশটি।

সম্প্রতি ‍যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ডাউনিং স্ট্রিট এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর সবচেয়ে অসহায় মানুষগুলোও যেন করোনা টিকার ডোজ পায়, সেই লক্ষ্যে কাজ করতে চায় যুক্তরাজ্য।

সূত্র: বিবিসি

এসএমডব্লিউ