বিয়ে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় পাকিস্তানের নারী শিক্ষা অধিকার কর্মী ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয়ী মালালা ইউসুফজাইকে আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছেন দেশটির এক ধর্মীয় নেতা। এই হুমকির পর আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা মুফতি সরদার আলী হক্কানি নামের ধর্মীয় ওই নেতাকে শান্তি বিঘ্নিত করার চেষ্টার দায়ে আটক করেছে বলে বৃহস্পতিবার ডনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

গত মাসের শেষের দিকে বিখ্যাত মার্কিন ফ্যাশন ম্যাগাজিন ভোগ-এ দেওয়া এক স্বাক্ষাৎকারে দু’জন মানুষের সম্পর্কের জন্য আদৌ বিয়ের প্রয়োজনীয়তা আছে কি-না; তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মালালা। বিয়ে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে মালালার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন পাকিস্তানের অনেক নাগরিক। দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।

ভোগ-এর ব্রিটিশ সংস্করণের প্রচ্ছদ তারকা হয়ে আসছেন নারীশিক্ষার প্রচারণা চালাতে গিয়ে তালেবানের হামলায় বেঁচে ফেরা মালালা। আগামী জুলাই মাসের সংখ্যায় তাকে নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করেছে ভোগ। সেই সাক্ষাৎকারে মাত্র ১৭ বছর বয়সে বিশ্বের সবচেয়ে কমবয়সী হিসেবে শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা ম্যাগাজিনটির সঙ্গে ব্যক্তিজীবন, বিশ্বাস, পড়াশোনা, টুইটারে কর্মকাণ্ড এবং অ্যাপলটিভি প্লাসের সঙ্গে তার নতুন অংশীদারিত্ব নিয়ে কথা বলেন।

মালালার কাছে বিয়ের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারি না, কেন সবাই বিয়ে করেন? দু’জনের সম্পর্ক একটি পার্টনারশিপও হতে পারে।’‌

মালালার এই মন্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। পাকিস্তানজুড়ে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। পাকিস্তানের পার্লামেন্টেও মালালা ইউসুফজাইয়ের বিয়ে-বিতর্কের মন্তব্যের সমালোচনা হয়।

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের মারওয়াত জেলার ধর্মীয় নেতা মুফতি সরদার আলী হক্কানির একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‌‘মালালা যখন পাকিস্তানে আসবে, তখন তার ওপর আত্মঘাতী হামলা চালানোর প্রথম চেষ্টা করবো আমি।’

এই হুমকির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বুধবার মারওয়াত জেলায় অভিযান চালিয়ে মুফতি সরদার আলীকে আটক করা হয়। মারওয়াত জেলা পুলিশ বলছে, মুফতি সরদার আলীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি এফআইআর দায়ের হয়েছে।

এফআইআরে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, মুফতি সরদার পেশওয়ারের একটি এলাকায় জনসমাগম ঘটিয়েছেন। সেখানে উপস্থিত জনতাকে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে মালালার ওপর হামলা চালানোর উসকানি দেন তিনি। বক্তব্য দেওয়ার সময় সশস্ত্র অবস্থায় দেখা যায় এই মুফতিকে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, মুফতি সরদারের বক্তব্য শান্তির জন্য হুমকি এবং জনগণকে আইন লঙ্ঘনে উসকানি দিয়েছে।

২০১২ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠী তালেবানের এক সদস্য মালালা ইউসুফজাইয়ের মাথায় গুলি চালিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। সেই সময় বেঁচে ফিরলেও মালালা এবার আর বাঁচতে পারবেন না বলে হুমকি দিয়েছেন ওই সদস্য। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তালেবানের ওই সদস্য বলেন, এবারে নিশানা ভুল হবে না। 

এসএস