ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে মশাকে আক্রান্ত করে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ ৭৭ শতাংশ কমিয়ে আনার যুগান্তকরী এক আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা একটি ‌‘অলৌকিক’ ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত মশা ব্যবহার করে দেখেছেন, এটি সেই মশার ডেঙ্গুর বিস্তার করার সক্ষমতা কমাতে পারে।

ইন্দোনেশিয়ার ইয়োগিয়াকার্তা শহরে এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে। ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রকোপ কমানোর আশায় এখন এটি অন্যান্য শহরেও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। দ্য ওয়ার্ল্ড মসকুইটো প্রোগ্রাম টিম বলছে, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসের বিষয়ে একটি সমাধান নিয়ে আসতে পারে এই গবেষণা।

৫০ বছর আগেও ডেঙ্গুর বিষয়ে মানুষ তেমন জানতেন না। কিন্তু পরবর্তীতে এটি ধীরগতিতে এগিয়ে মহামারিতে রূপ নেয়। বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত মাত্র ৯টি দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়েছিল। কিন্তু এখন বছরে প্রায় ৪০ কোটি মানুষ এ ভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছেন।

গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছে ওলবাকিয়া ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত মশা। গবেষক দলের সদস্য ড. কেটি অ্যান্ডারস গবেষণার এই ফলকে ‌‘প্রাকৃতিকভাবে অলৌকিক’ বলে মন্তব্য করেছেন। ওলবাকিয়া মশার ক্ষতি করে না। কিন্তু ডেঙ্গু ভাইরাসের জন্য প্রয়োজনীয় একটি অংশকে শরীর থেকে অপসারণ করে।

ব্যাকটেরিয়াটি ডেঙ্গু ভাইরাসের পুনরায় তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়াকে কঠিন করে তোলে। ফলে মশাটি আবার যখন কাউকে কামড়ায় তখন তার আক্রান্ত করার সক্ষমতা খুব বেশি থাকে না। পরীক্ষায় ওলবাকিয়ায় আক্রান্ত ৫০ লাখ মশার ডিম ব্যবহার করা হয়। প্রতি দুই সপ্তাহে একবার করে শহরের একটি জায়গায় পানির পাত্রে রাখা হয়েছিল এসব ডিম।

এ প্রক্রিয়ায় আক্রান্ত মশার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে ৯ মাস পর্যন্ত সময়ের দরকার হয়। ইয়োগিয়াকার্তা শহরকে ২৪টি জোনে ভাগ করে অর্ধেক পরিমাণ মশা ছাড়া হয়েছিল।

নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশ করা হয়েছে এই গবেষণার ফল। সেখানে বলা হয়েছে, ডেঙ্গু আক্রান্তের ঘটনা ৭৭ শতাংশ কমেছে এবং আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালে নেয়ার সংখ্যা ৮৬ শতাংশ কমেছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির সাথে আলাপকালে এই গবেষণা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ড. অ্যান্ডারস। তিনি বলেছেন, ডেঙ্গু নিয়ে এই গবেষণার ফলাফল সত্যিই অভূতপূর্ব। আমরা মনে করি, বিশ্বজুড়ে বড় শহরগুলোতে যেখানে ডেঙ্গু বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা সেখানে এটা দারুণ প্রভাব ফেলতে পারে।

ওলবাকিয়া যেসব মশার শরীরে ঢুকবে সেটির উর্বরতাকে এমনভাবে পরিবর্তন করতে পারে যে ওই মশার বাচ্চার মধ্যেও তার উপস্থিতি থাকবে। এর মানে হলো একবার ওলবাকিয়া দেয়া হলে এটা দীর্ঘ সময় থাকতে পারে এবং ডেঙ্গু ইনফেকশন থেকে সুরক্ষা দেয়া অব্যাহত রাখতে সক্ষম।

তবে এটা অন্য কন্ট্রোল মেথডগুলো, যেমন কীটনাশক দেয়া বা অনুর্বর পুরুষ মশা ছাড়ার মতো পদ্ধতিগুলোর বিপরীত। ইয়োগিয়াকার্তা শহরের রোগ প্রতিরোধ বিভাগের প্রধান ডা. ইয়ুডিরিয়া আমেলিয়া বলছেন, প্রথম পরীক্ষার ফলাফলে তারা আনন্দিত। আমরা আশা করি এই পদ্ধতিটি ইয়োগিকার্তার শহর এলাকায় প্রয়োগ করা হবে এবং ইন্দোনেশিয়ার অন্য শহরগুলোতেও বিস্তৃত হবে।

এই পরীক্ষাটি কয়েক বছরের গবেষণার পর একটি মাইলফলক অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ ডেঙ্গু ছড়ানো এডিস মশা সাধারণত ওলবাকিয়ায় আক্রান্ত হয় না।

এসএস/জেএস