শুক্রবার বিকেলে কলকাতার তৃণমূল ভবনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে দলটিতে যোগ দেন মুকুল রায়

ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতির প্রভাবশালী নেতা মুকুল রায়। শুক্রবার বিকেলে কলকাতার তৃণমূল ভবনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে দলটিতে যোগ দেন তিনি। তবে মুকুল রায়ের মতো প্রভাবশালী নেতার বিজেপি ছেড়ে যাওয়ার পর দলটির বক্তব্যে যেন ‘আঙুরফল টক’ প্রবাদটি সামনে চলে এসেছে।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলছেন, ‘মুকুল থাকায় লাভ তো বিশেষ কিছু হয়নি। ক্ষতি আর কী হবে?’

অথচ এই মুকুলকে নিয়েই বিজেপির একাংশের গর্বের সীমা ছিল না। ২০১৭ সালের ৩ নভেম্বর দিল্লিতে দলের কেন্দ্রীয় দফতরে নিয়ে গিয়ে মুকুলকে দলে স্বাগত জানান বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব। তৃণমূলকে ধাক্কা দিতে এটা একটা বিরাট পদক্ষেপ বলেও প্রচার করেন তারা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে শুরু করে রাজ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়— সকলেই বিভিন্ন সময়ে মুকুলের প্রশংসা করেছে‌ন।

এমনকি, শুক্রবার মুকুল তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষ নেতার স্বীকারোক্তি, ‘সর্বশেষ পঞ্চায়েত এবং ল‌োকসভা ভোটে মুকুল রায়ের অবদান অস্বীকার করা যাবে না। এখন তিনি তৃণমূলে চলে যাওয়ায় বিজেপির কাছে উনি হয়েছেন আঙুরফল টক!’

বস্তুত, মুকুল বিজেপি ছাড়ার পরে গেরুয়া শিবির কার্যত দিশেহারা। তিনি যে এ দিনই তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছেন, তার ইঙ্গিতটুকুও বিজেপির কাছে আগাম ছিল না। বিজেপিতে মুকুল যে সর্বভারতীয় নেতার সব চেয়ে ঘনিষ্ঠ ছিলেন, সেই কৈলাস-সহ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এ দিন কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।

মুকুল এ দিন বাড়ি থেকে তৃণমূল ভবন যাওয়ার সময় তার কাছে দিল্লি থেকে অনেক ফোন আসে। কিন্তু তিনি কোনো ফোন ধরেননি বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।

এদিকে মুকুলের তৃণমূলে ফিরে যাওয়া দলের ভাঙনে আরও ইন্ধন জোগাবে বলে আশঙ্কা করছে বিজেপির একাংশ। দলের এক নেতার কথায়, ‘মুকুল রাজ্যের প্রতিটি বিধানসভাকে হাতের তালুর মতো চিনতেন। বিধানসভা নির্বাচনে মুকুলকে কৌশল নির্ধারণকারী হিসাবে ব্যবহার করা যেত। দল তা করেনি।’

অবশ্য মুকুলের পথ ধরে দলের কোন কোন সাংসদ এবং বিধায়ক তৃণমূলে যেতে পারেন, তা শুক্রবার থেকেই মরিয়া হয়ে খুঁজতে শুরু করেছে বিজেপি নেতৃত্ব। তাদের সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন অন্তত ৭ জন। যদিও তাদের চার জন নানা ঘটনায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া নিয়মিত দিয়ে চলেছেন। তবে তা ‘নাটক’ কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন বিজেপি নেতারা।

টিএম