যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনে (পার্লামেন্ট) কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ জনে। নিহতদের মধ্যে সাবেক এক নারী সেনা সদস্য রয়েছেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

বুধবার (৬ জানুয়ারি) ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে ইলেকটোরাল কলেজের দেওয়া ভোটগুলো গণনা এবং তা চূড়ান্তভাবে প্রত্যয়ন করার সময় ট্রাম্প সমর্থকরা নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে ক্যাপিটলের ভেতরে প্রবেশ করে।

ওয়াশিংটন ডিসির পুলিশ জানিয়েছে, ক্যাপিটল ভবনে সহিংসতায় অন্তত চারজন মারা গেছে। এর আগে পুলিশের গুলিতে এক নারী নিহত হন, পরে আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।

বিবিসি বলছে, ক্যাপিটল ভবনে প্রবেশ করার পর গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রথমে মারা যাওয়া ওই নারীর নাম অ্যাশলি ব্যাবিট। তিনি দেশটির সাবেক সেনা সদস্য ও স্যান দিয়াগোর বাসিন্দা। ওয়াশিংটন সময় বুধবার দুপুর ৩টার দিকে তিনি গুলিবিদ্ধ হন এবং পরবর্তীতে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র মুরিয়েল বাউজার কিছুক্ষণ আগে স্থানীয় সময় বুধবার রাতে ক্যপিটল হিলের বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও হতাহত সম্পর্কে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন।

সেখানে তিনি জানান, হাউস রুমে অধিবেশন চলাকালে কয়েকজন জোরপূর্বক প্রবেশ করে। ঐ দলটির সদস্য ছিলেন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া নারী। ক্যাপিটল ভবনে জোরপূর্বক প্রবেশ করার সময় বিক্ষোভকারীদের বাধা দেন সাদা পোশাকের কয়েকজন কর্মকর্তা। একপর্যায়ে কর্মকর্তাদের একজনের গুলিতে ওই নারী মারা যান।

মেয়র জানান, নিহত হওয়া বাকি তিনজনের একজন নারী ও দুই জন পুরুষ। এছাড়া মেট্রো পুলিশ ডিপার্টমেন্টের অন্তত ১৪ জন সদস্য আহত হয়েছেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে ক্যাপিটল হিলের সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪৭ জনকে কারফিউ ভাঙার জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে। এসময় বিভিন্ন ধরনের অন্তত ৫টি বন্দুক জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন ডিসির মেট্রোপলিটান পুলিশ।

পুলিশ বিভাগের প্রধান জানিয়েছেন, আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

আমেরিকার আইনপ্রণেতারা যখন নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের জয় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করার জন্য অধিবেশনে বসেছিলেন, ঠিক তখনই ট্রাম্পের শত শত সমর্থক কংগ্রেসের ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে পড়ে।

বুধবার দিনের শুরুতে হাজার হাজার ট্রাম্প সমর্থক ‘আমেরিকা বাচাও’ নামক একটি গণজমায়েতে অংশ নিতে ওয়াশিংটনে আসে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই জনসভায় ভাষণ দিয়ে জো বাইডেনের বিজয় অনুমোদন করার বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন।

ওয়াশিংটনে জড়ো হওয়া কয়েক হাজার ট্রাম্প সমর্থকদের মধ্যে উগ্রপন্থী বিভিন্ন গ্রুপের সদস্যরাও ছিল। সেই সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে নভেম্বরের নির্বাচনে পরাজয় মেনে না নেওয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প।

এরপরই সমাবেশের একটু দূরে কয়েকশ' ট্রাম্প সমর্থক ক্যাপিটল ভবনে নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে কংগ্রেসের অধিবেশন চলার মধ্যেই পুলিশের বাধা ভেঙে ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে পড়ে ট্রাম্প সমর্থকরা। এ সময় তাদের অধিকাংশের হাতে ছিল ট্রাম্পের পতাকা। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ও পিপার স্প্রে ব্যবহার করে পুলিশ।

যেভাবে শুরু হয় সহিংসতা
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জয় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করার জন্য বুধবার অধিবেশনে বসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের শত শত সমর্থক নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে সেই অধিবেশনে ঢুকে পড়ে।

দুপুরের পরই আমেরিকার রাজধানী শহরে এই নাটকীয় দৃশ্যে দেখা যায় - শত শত বিক্ষোভকারী ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে পড়ছে, আর পুলিশ কংগ্রেস সদস্যদের পাহারা দিয়ে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিচ্ছে।

কার্যত কয়েক ঘণ্টা এই ভবন দখল করে রাখার পর বিক্ষোভকারীরা ধীরে ধীরে ক্যাপিটল প্রাঙ্গণ ছেড়ে বাইরে চলে যেতে থাকে। এই শোরগোলের মধ্যেই বাইডেনের জয় অনুমোদন করার জন্য চলমান কংগ্রেস অধিবেশন স্থগিত করা হয়।

যেভাবে সুড়ঙ্গে আশ্রয় নেন আইনপ্রণেতারা
অধিবেশন স্থগিত করার ঘোষণা দেওযা হলেও কিছুক্ষণ পরই ভেতরের পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। প্রতিনিধি পরিষদের নিরাপত্তাকর্মীরা আইনপ্রণেতাদের সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ব্যারিকেড ভেঙে অনেকে ভেতরে ঢুকে পড়েছে। সবাইকে নিরাপদে আশ্রয় নিতে বলেন তারা। 

এমন মুহূর্তে জানা যায়, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স সিনেট চেম্বার ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এতে আতঙ্ক আরও বাড়ে। ট্রাম্পের ইলেকটোরাল কলেজ জয় ঠেকাতে রিপাবলিকানদের তোলা আপত্তি নিয়ে সিনেটে তখন বিতর্ক চলছিল। 

সংঘর্ষের মধ্যে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যদের পাহারা দিয়ে অধিবেশন কক্ষ থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেয় পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে সিনেট অধিবেশনও মুলতবি করা হয়। যৌথ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করা মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকেও পাহারা দিয়ে অধিবেশন কক্ষ থেকে বের করে পুলিশ। একপর্যায়ে আইনপ্রণেতারা ভবনের নিচের একটি সুড়ঙ্গে আশ্রয় নেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অধিবেশনে উপস্থিত এসব আইনপ্রণেতার অনেকে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে পাশের একটি দরজা দিয়ে ভবনের একেবারে নিচে একটি নিরাপদ সুড়ঙ্গে গিয়ে আশ্রয় নেন।

কংগ্রেসে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনার পর নিরাপত্তাকর্মীদের তিন ঘণ্টার চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে প্রাণ হারান চারজন।

পুনরায় অধিবেশন শুরু

এদিকে নিরাপত্তাকর্মীদের তিন ঘণ্টার চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর ক্যাপিটল ভবনে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন আবারও শুরু হয়েছে।

টিএম