নিজের ছয় সন্তানের মধ্যে পাঁচজনকেই বাথটাবে ডুবিয়ে হত্যার অভিযোগ রয়েছে জার্মানির এক মায়ের বিরুদ্ধে। স্থানীয় সময় সোমবার (১৪ জুন) এই অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আদালতে বিচার শুরু হয়েছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আদালতে মুখ খুলবেন না বলেও জানিয়েছেন অভিযুক্ত। আদালতে দোষী প্রমাণিত হলে আজীবন কারাবাসের শাস্তি হবে জার্মান এই নারীর।

জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, ২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জার্মানির জলিঙ্গেন শহরের এক বাড়িতে পাঁচটি শিশুকে বিছানায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাদের মাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ড্যুসেলডর্ফ রেলওয়ে স্টেশনের রেললাইন থেকে। ধারণা করা হয়, তিনি ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন।

২৮ বছর বয়সী ওই নারীর পরিবারের পক্ষ থেকে তখন দাবি করা হয়- তিনি তার ছয় সন্তানের মধ্যে পাঁচ সন্তানকে হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। ১১ বছর বয়সী একটি সন্তান স্কুলে থাকায় বেঁচে যায়। নিহত পাঁচ শিশুর বয়স ১৬ মাস থেকে সাড়ে আট বছরের মধ্যে। ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে গুরুতর আহত হলেও অভিযুক্ত নারী এখন শারীরিকভাবে সুস্থ।

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তাকে দেশটির নর্থ রাইন-ওয়েস্টফেলিয়া প্রদেশের কোলন শহরের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সোমবার ভ্যুপার্টাল জেলা আদালতে শুরু হয়েছে তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলার শুনানি।

তবে শুনানির আগেই ২৮ বছর বয়সী নারী জানান, তার পাঁচ শিশুর হত্যাকাণ্ড এবং পারিবারিক বিষয়ে আদালতে কোনো কথা বলবেন না। নিজেকে নির্দোষ দাবি করে প্রকৃত অপরাধীর শাস্তিও দাবি করেছেন তিনি।

তার দাবি, ২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মুখোশধারী এক ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশ করে পাঁচ সন্তানকে হত্যা করে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের দাবি, ওই নারী সেদিন তার পাঁচ সন্তানের সকালের নাস্তার সঙ্গে এমন ট্যাবলেট মিশিয়ে দিয়েছিলেন যা খেয়ে তারা ঘুমিয়ে পড়ে। তারপর ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের বাথটাবে ডুবিয়ে মেরে তোয়ালে জড়িয়ে এনে যার যার বিছানায় শুইয়ে দেন।

আদালত ইতোমধ্যে অভিযুক্ত নারীর মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছে। বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষায় মানসিক রোগের কোনো লক্ষণ ধরা পড়েনি। তবে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদনকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে নতুন পরীক্ষার দাবি জানিয়েছেন।

তাদের মতে, আদালতের নিয়োগ করা মনস্তাত্বিক অভিযুক্ত নারীকে গোপনীয়তা রক্ষার অঙ্গীকার করলেও পরে তা রক্ষা করেননি। এছাড়া অভিযুক্ত নারী দাবি করেছিলেন, তার বাবা তার ওপর যৌন নিপীড়ন চালাতেন। কিন্তু মনস্তাত্বিকরা এ বিষয়ে পাঁচ সন্তানকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত নারীর বাবার সঙ্গে কথা বলেননি বলেও কথিত প্রতিবেদনকে বিবাদীপক্ষের আইনজীবীরা গ্রহণযোগ্য মনে করছেন না।

বৃহস্পতিবার আবার ভ্যুপার্টালের জেলা আদালতে মামলার শুনানি হবে। মোট ১১ দিনের শুনানি আগামী আগস্টের মাঝামাঝি নাগাদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে স্বামী পরিত্যক্তা ২৮ বছর বয়সী এই নারীর আজীবন কারাদণ্ডের সাজা হতে পারে।

টিএম