থাই-কম্বোডিয়া সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, পালাচ্ছে হাজারো বাসিন্দা
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্ত অঞ্চলে নতুন করে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার পর উভয় দেশের সীমান্তবর্তী এলাকার হাজার হাজার বাসিন্দা তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। সোমবার উভয় দেশের সৈন্যদের হামলা-পাল্টা হামলায় পাঁচজনের প্রাণহানির ঘটনার পর সীমান্তের আতঙ্কিত বাসিন্দারা পালিয়ে যাচ্ছেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলেছে, সোমবারের সীমান্ত সংঘাতের জন্য পরস্পরকে দায়ী করেছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। গত জুলাইয়ে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার পর এটিই দুই দেশের মাঝে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষ।
বিজ্ঞাপন
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল বলেছেন, থাইল্যান্ড কখনোই সহিংসতা চায়নি। তবে সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আর কম্বোডিয়ার সাবেক নেতা হুন সেন থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিনা উসকানিতে হামলার অভিযোগ করেছেন।
গত মে মাসের শুরুর দিক থেকে প্রতিবেশী দুই দেশের ব্যাপক উত্তেজনা চলছে। উভয় দেশের সংঘাতে ৪০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া পাল্টাপাল্টি আমদানি নিষেধাজ্ঞা ও ভ্রমণে বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে দুই দেশ।
বিজ্ঞাপন
সোমবার থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী দেশটির উবন রাচাথানি প্রদেশে কম্বোডিয়ার ছোড়া গোলার জবাব দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে। এমনকি বিতর্কিত সীমান্ত বরাবর কম্বোডিয়া বিমান হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করে থাই সেনাবাহিনী। তবে কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, কম্বোডিয়ার প্রেহ ভিহিয়ার প্রদেশে প্রথম হামলা চালিয়েছে থাই সামরিক বাহিনী।
সোমবারের সংঘর্ষে অন্তত একজন থাই সৈন্য ও কম্বোডিয়ার চার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া এই সংঘাতে আরও অন্তত এক ডজন মানুষ আহত হয়েছেন বলে উভয় দেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
রোববার উভয় দেশের সৈন্যদের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ায় থাইল্যান্ডের সীমান্তের পাঁচটি প্রদেশের প্রায় ৬৫০টি স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন থাই শিক্ষামন্ত্রী।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, কম্বোডিয়ার সীমান্ত লাগোয়া কয়েকটি প্রদেশের শত শত স্কুল থেকে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় চারপাশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দুই দেশের শত বছরের পুরোনো সীমান্তবিরোধ নিয়ে গত ২৪ জুলাই ব্যাপক উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। ওই দিন সকালে কম্বোডিয়ার রকেট হামলার জবাবে বিমান হামলা চালায় থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনী।
কয়েকদিন পর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের মধ্যস্থতায় ‘‘তাৎক্ষণিক ও শর্তহীন যুদ্ধবিরতিতে’’ রাজি হয় ব্যাংকক ও নম পেন। পরে গত অক্টোবরে মালয়েশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে উভয় দেশ যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই করে। সেই সময় থাই-কম্বোডিয়ার সীমান্ত সংঘাতের অবসানকে ‘‘ঐতিহাসিক সাফল্য’’ দাবি করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরের মাত্র দুই সপ্তাহ পর কম্বোডিয়া সীমান্তে স্থল মাইন বিস্ফোরণে থাইল্যান্ডের দুই সৈন্য আহত হওয়ার পর চুক্তির বাস্তবায়ন স্থগিতের ঘোষণা দেয় ব্যাংকক। যদিও কম্বোডিয়া বারবার বলেছে, তারা চুক্তিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সূত্র: বিবিসি।
এসএস