এআইআইএমএস প্রধান ডা. রণদীপ গুলেরিয়া

একাধিক টিকার মিশ্রণ মানবদেহে করোনা প্রতিরোধী শক্তি বাড়াতে সক্ষম বলে জানিয়েছেন ভারতের চিকিৎসা গবেষণা বিষয়ক শীর্ষ সরকারি প্রতিষ্ঠান অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স (এআইআইএমএস)-এর প্রধান ডা. রণদীপ গুলেরিয়া।

 তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে আরও গবেষণা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

শনিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডা. গুলেরিয়া বলেন, ‘সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রথম ডোজে এক টিকা এবং দ্বিতীয় বা বুস্টার ডোজে অন্য টিকা যারা নিয়েছেন, তাদের দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যান্যদের চেয়ে কিছুটা হলেও বেশি।’

‘তবে যারা দু’দফায় দু’ধরনের টিকা নিয়েছেন, তাদের কয়েকজন অল্প বা মাঝারি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগেছেন বলেও তথ্য এসেছে; বাজারে এখন ফাইজার-মডার্না-স্পুটনিক ৫-অ্যাস্ট্রাজেনেকাসহ বিভিন্ন কোম্পানির টিকা পাওয়া যাচ্ছে। ভবিষ্যতে টিকার সংখ্যা আরও বাড়বে। কোন ধরনের টিকার মিশ্রন মানবদেহে প্রবেশ করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সবচেয়ে কম হবে সে তথ্য জানতে এ সম্পর্কে আরও গবেষণা প্রয়োজন।’

সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এ বিষয়ে কাজ করছে এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তার ফলাফল পাওয়া যাবে।

গত মাসে বিখ্যাত চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল- যুক্তরাজ্যে যারা প্রথম ডোজে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও দ্বিতীয় ডোজে ফাইজারের টিকা নিয়েছিলেন তারা পরবর্তীতে অল্প কয়েকদিন মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগেছিলেন।

তাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কি হারে তৈরি হয়েছিল তা অবশ্য এখনও জানা যায়নি। তবে স্পেনে যারা দুই ডোজে দুই কোম্পানির টিকা নিয়েছেন, অন্যান্য টিকা গ্রহণকারীদের তুলনায় তাদের দেহে অধিকমাত্রায় কার্যকর প্রতিরোধী প্রোটিন গড়ে উঠেছে বলে উঠে এসেছে এক গবেষণায়। বার্তাসংস্থা রয়টার্সে সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

গত দু’মাস ধরে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ পার করছে ভারত। মার্চের শেষ থেকে মে মাসের মাঝমাঝি পর্যন্ত ছিল এই ঢেউয়ের সবচেয়ে কঠিন পর্যায়। এই সময়সীমায় দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন দুই লক্ষাধিক মানুষ, আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে দেড় কোটি।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এই বিপর্যয়ের জন্য প্রধানত দায়ী করোনার সবচেয়ে সংক্রামক ধরন ডেল্টা। গত বছর অক্টোবরে ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া এই অভিযোজিত ধরনটিকে ইতোমধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক ও প্রধান করোনাভাইরাসে ধরন (ডমিন্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট) হিসেবে উল্লেখ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

এছাড়া অতি সম্প্রতি ভারতে ডেল্টা প্লাস নামে আর একটি নতুন অভিযোজিত ধরনও শনাক্ত হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এ পর্যন্ত এ ধরনে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে ৪০ জন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ একাধিক আন্তর্জাতিক গবেষণার ফলাফল বলছে, করোনা টিকার ডোজকে ফাঁকি দিতে সক্ষম এই ডেল্টা ধরন; অর্থাৎ টিকার দু’ডোজ নিয়েছেন- এমন ব্যক্তিরাও ডেল্টায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।

গবেষণায় আরও জানা গেছে, টিকার প্রথম ডোজে মানবদেহে ডেল্টা ধরনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি হয় ৩৩ শতাংশ, দ্বিতীয় ডোজে তা উন্নীত হয় ৮০-৯০ শতাংশে।

শনিবারের সাক্ষাৎকারে এ সম্পর্কিত প্রশ্নে উত্তরে এআইআইএমএস এর প্রধান বলেন, ‘টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পরও ডেল্টায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। তবে টিকা নেওয়ার পরও যদি কেউ করোনায় আক্রান্ত হন- তাদের গুরুতর অসুস্থ হওয়া বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি ব্যাপকহারে হ্রাস পায়।’

ডেল্টা প্লাসকে মোকাবিলা করতে সরকার কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তার পরই পদক্ষেপের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে আপাতত আমরা ডেল্টাকেই গুরুত্ব দিচ্ছি।’

সূত্র: এনডিটিভি

এসএমডব্লিউ