জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ’কে ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলোর ভেতরের কোনো ছবি বা তথ্য দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মাদ বাকের কলিবফ। তার মতে, পরমাণু কেন্দ্রগুলোতে পর্যবেক্ষণের ব্যাপারে তেহরানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার স্বাক্ষরিত হওয়া চুক্তির মেয়াদ ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। রোববার (২৭ জুন) তিনি একথা বলেন।

রোববার পার্লামেন্ট অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে ইরানি স্পিকার বলেন, ‘আইএইএ’র সঙ্গে যে তিন মাসের সাময়িক চুক্তি হয়েছিল তা নবায়ন করা হয়নি। কাজেই তিন মাস মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে বসানো ক্যামেরাগুলোর কোনো ছবি বা ভিডিও চিত্র বা অন্য কোনো তথ্য আইএইএ পাবে না। এসব ছবি ও তথ্য ইরানের কাছে সংরক্ষিত থাকবে।’

বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, ইরানের এই ঘোষণার ফলে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি কার্যকর করার জন্য তেহরানের সঙ্গে বিশ্বের ছয় পরাশক্তির মধ্যকার চলমান আলোচনাকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

ইরানের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা তেহরান টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটির পার্লামেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা এবং পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানের ওপর থেকে সকল নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নিতে ব্যর্থ হয় তাহলে আমরা পরমাণু কেন্দ্রগুলোতে থাকা আইএইএ’র ক্যামেরা বন্ধ করে দেবে।’

প্রসঙ্গত, ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে বসানো ক্যামেরার মাধ্যমে দূর নিয়ন্ত্রিতভাবে আইএইএ যেন এসব স্থাপনার ওপর নজরদারি করতে পারে, সে ব্যাপারে গত ফেব্রুয়ারি মাসে সংস্থাটির সঙ্গে তেহরানের তিন মাসব্যাপী চুক্তি হয়েছিল। গত ২২ মে সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। এরপর আরও এক মাসের জন্য এই চুক্তির মেয়াদ বাড়তে একমত হয় উভয়পক্ষ। আর এখন জুনের শেষ সপ্তাহে এসে সর্বশেষ চুক্তির মেয়াদও শেষ হওয়ায় জাতিসংঘের এই নজরদারি সংস্থাটিকে কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানাল ইরান।

পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য ৯০ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ করতে হয়। ইরান ইতোপূর্বে ইউনিয়াম ৬০ শতাংশ হারে সমৃদ্ধকরণের কথা জানিয়ে রেখেছে। আর সেটা করতে পারলে দেশটি সন্দেহাতীত ভাবে ব্যাপক বিধ্বংসী এই অস্ত্রটি অর্জনের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। তবে তেহরান বরাবরই বলে আসছে যে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ।

২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্ব পরাশক্তির মধ্যে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘একপেশে’, ‘এর কোনো ভবিষ্যৎ নেই’ অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলার ব্যাপারে ইরানও উদাসীন হয়ে পড়ে।

অবশ্য এই পরমাণু চুক্তি ফের কার্যকর করতে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ইরান ও বিশ্বের ছয় পরাশক্তি দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে।

সূত্র: রয়টার্স

টিএম