বিজেপিবিরোধী জোটের নেতৃত্ব হারাচ্ছেন সোনিয়া-রাহুল!
কংগ্রেসকে ছাড়া বিজেপিবিরোধী জোট অবাস্তব— মোটের ওপর এ ব্যাপারে একমত ভারতের বিরোধী দলগুলো। সম্প্রতি এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ারের বাড়ি বিরোধী জোটের প্রথম বৈঠকে কংগ্রেসের বড় কোনো নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো না হলেও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, এটা কংগ্রেস-বিরোধী কোনো মঞ্চ নয়। তবে প্রশ্ন, কংগ্রেস থাকলেও ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে বিরোধী জোটের নেতৃত্বে কি থাকবে সোনিয়া-রাহুলের দল?
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, গত কয়েক বছরে সারা ভারতজুড়ে বিজেপি-বিরোধিতায় কংগ্রেসের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে বিভিন্ন আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস, তামিলনাড়ুতে ডিএমকে, কেরালায় বাম, মহারাষ্ট্রে এনসিপি-শিবসেনা সরাসরি লড়াই করে বিজেপিকে পরাজিত করেছে।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে বিহারে হারলেও বিজেপির বিরুদ্ধে দুর্দান্ত লড়াই করেছে আরজেডি। উত্তরপ্রদেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোটে ভালো ফল করে এসপি। মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, তামিলনাড়ু এবং বিহারে বিজেপি-বিরোধী ফ্রন্ট বা সরকার এবং পাশাপাশি কংগ্রেসের একা লড়াইয়ের ফলাফলে একটা ছবি স্পষ্ট। দেশটির জাতীয়স্তরে বিজেপি-বিরোধী কোনো জোট তৈরি হলে কংগ্রেস কেবল সেটার অংশ থাকতে পারে, নেতৃত্বে নয়।
২০১৯ সালের সর্বশেষ লোকসভা ভোটে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস যে ৫২টি আসন পেয়েছে, তার মধ্যে ৪৬টি এসেছে বিজেপি প্রার্থী নয় এমন প্রতিযোগীর সঙ্গে লড়াই করে। এমনকি সেগুলো হিন্দি ভাষাভাষী রাজ্য থেকেও নয়। ১৫টি এসেছে কেরালা থেকে। তামিলনাড়ু এবং পাঞ্জাব থেকে ৮টি করে। তেলাঙ্গনা এবং আসাম থেকে ৩টি করে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে দু’টি।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া মাত্র ৬টি আসন কংগ্রেস পেয়েছে সরাসরি বিজেপির সঙ্গে লড়াই করে। হিন্দি ভাষাভাষী রাজ্য এবং গুজরাটে কংগ্রেসের সাফল্য নেই। উত্তরপ্রদেশে ৮০টির মধ্যে ১টি, বিহারে ৪০টির মধ্যে ১টি, মধ্যপ্রদেশে ২৮টির মধ্যে ১টি, রাজস্থান এবং গুজরাটে একটিও আসন পায়নি কংগ্রেস।
এই পরিপ্রেক্ষিতে আগামী দিনের বিজেপি-বিরোধিতার প্রশ্নে শারদ পাওয়ার-মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জুটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। মনে করা হচ্ছে, কংগ্রেস নেতৃত্বে না থাকলে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত এমন দলগুলোকেও (ওয়াইএসআর কংগ্রেস, টি আরএস, আপ, অকালি) সঙ্গে রাখা যাবে।
অবশ্য এটা সত্য যে, ২০০৪ সালে সরাসরি বিজেপির সঙ্গে লড়াই করে তৎকালীন অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়েছিলেন সোনিয়া গান্ধী। কিন্তু আজ তার সেই উদ্যম, শারীরিক ক্ষমতা নেই বলেই মনে করছে বিরোধী অন্য রাজনৈতিক দলগুলো।
এছাড়া রাজনীতিতে রাহুল গান্ধীরও এমন কোনো সফলতা নেই যে, তিনি আলাদা আলাদা ভাবে মমতা, স্ট্যালিন অথবা উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে বিরোধী নেতার আসনে বসতে পারেন।
মোদি-বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে, বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে হটাতে কংগ্রেসকে প্রয়োজন। কিন্তু নেতৃত্বের রাশটি থাকবে অন্য কারও হাতে। আর তৃণমূল কংগ্রেসের বক্তব্য, এই মুহূর্তে দেশে সব চেয়ে যোগ্য ও সফল বিজেপি-বিরোধী মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে আঞ্চলিক জোটের এই সম্ভাব্য প্রস্তাবে সোনিয়া গান্ধীর কংগ্রেস রাজি হবে কি না, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়।
টিএম