ইউরোপের নয়টি দেশ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকার ভারতীয় সংস্করণ কোভিশিল্ডের অনুমোদন দিয়েছে। এই দেশগুলো হলো- অস্ট্রিয়া, জার্মানি, স্লোভেনিয়া, গ্রীস, আইসল্যান্ড, স্পেন, এস্তোনিয়া, সুইজারল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড।

এই অনুমোদনের অর্থ হলো, যেসব ভারতীয় কোভিশিল্ড টিকার দুই ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন- এই সাতটি দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে তাদের কোনো প্রকার বাধার সম্মুখীন হতে হবে না, বাধ্যতমূলক কোয়ারেন্টাইনেও তাদের থাকতে হবে না। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি অনলাইন।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনা টিকা ইউরোপে ওয়াইড পাস বা ডিজিটাল গ্রিন সার্টিফকেট পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে। আগামী ১ জুলাই থেকে তা কার্যকর হবে।

এই টিকারই যে ডোজগুলো ভারতে তৈরি হচ্ছে, তার নাম কোভিশিল্ড। এটি প্রস্তুত করেছে বিশ্বের বৃহত্তম টিকা উৎপাদনকারী কোম্পানি সেরাম ইনস্টিটিউট। ভারতের গণটিকাদান কর্মসূচিতে বর্তমানে ব্যাপকহারে সেরামের তৈরি কোভিশিল্ড টিকা দেওয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি ৪টি করোনা টিকার অনুমোদন দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউরোপিয়ান মেডিকেল এজেন্সি (ইএমএ)। এগুলো হলো ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনা টিকার ইউরোপীয় সংস্করণ কেমিরনাটি, অক্সফোর্ড- অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকার ইউরোপীয় সংস্করণ ভ্যাক্সজারভ্রিয়া, জনসন অ্যান্ড জনসনের ইউরোপীয় সংস্করণ জ্যানসেন এবং মডার্না।

ইউরোপীয় সংস্করণটির অনুমোদন দিলেও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভারতীয় সংস্করণটির অনুমোদন দেয়নি ইএমএ। অবশ্য ইউরোপে গ্রিন পাসের জন্য অনুমোদন পেতে আবেদন করা হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে সেরামের পক্ষ থেকেও কিছু জানানো হয়নি।

এক আদেশে এ সম্পর্কে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইএমএ যেসব টিকার অনুমোদন দিয়েছে, সেসবের ডোজ গ্রহণকারীদের গ্রীন পাস বা ঝুঁকিমুক্ত সনদ দেওয়া হবে এবং বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে যেসব যাত্রীর কাছে সেই ‘গ্রীন পাস’ থাকবে, তারা কাজ বা পর্যটনসূত্রে বাধাহীনভাবে ইইউভুক্ত দেশসমূহে ঘোরাফেরা করতে পারবেন।

এই ঘোষণাই জটিলতা সৃষ্টি করেছে কাজ কিংবা পর্যটনে ইউরোপে ভ্রমণে ইচ্ছুক ভারতীয়দের সামনে। কারণ, চলতি বছর ১৬ জানুয়ারি থেকে ভারতে শুরু হওয়া গণটিকাদান কর্মসূচীতে কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিন- এই দুই করোনা টিকা ব্যবহার করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে পরে ইইউ-এর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বাইরের দেশের যেসব ভ্রমণকারী ইইউ-এর অনুমোদিত টিকার বাইরে অন্য কোনো টিকা নিয়েছেন, ইউরোপের সদস্য রাষ্ট্রগুলো সম্ভবত তাদের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন এবং অনুমোদিত কোনো টিকার ডোজ গ্রহণের আদেশ জারি করতে পারে।’

উদ্ভুত এই জটিলতার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২৯ জুন) কোভিশিল্ডের প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান আদর পুনাওয়ালা এক টুইটে জানিয়েছিলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও কূটনৈতিক পর্যায়ে দ্রুত এই বিষয়টির সুরাহা হবে বলে আশা করছেন তিনি।

এদিকে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইউ এই আদেশ জারির পর ভারতও পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করছিল। সেটি হলো- কোভিশিল্ড এবং কোভ্যাক্সিনকে ইএমএ অনুমোদন না দেওয়া হলে ইইউ এর সদস্য দেশসমূহের যেসব যাত্রী ও ভ্রমণকারী ভারতে আসবেন, তাদের ক্ষেত্রেও বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন আরোপ করবে ভারতের সরকার।

এর মধ্যেই কোভিশিল্ডের অনুমোদন দিল ইইউ-এর সদস্য ৯ টি দেশ। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ইতোমধ্যে আশ্বাস দিয়েছেন, ইউরোপে কোভিশিল্ডের অনুমোদনের ব্যাপারে ইইউ-এর পররাষ্ট্র বিভাগের প্রধান জোসেপ বরেলের সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি।

সূত্র: এনডিটিভি, খালিজ টাইমস

এসএমডব্লিউ