করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যার তালিকায় বিশ্বে ভারতের অবস্থান তৃতীয়

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তেই ভারতে শুরু হয়েছিল মৃত্যুর মিছিল। শ্মাশানে শ্মশানে সৃষ্টি হয় উপচে পড়া ভিড়ের। হাজার হাজার করোনা রোগীর মৃতদেহ চিতায় পুড়তে দেখে সারা বিশ্ব।

এমনকি শ্মশানে জায়গা না পেয়ে একাধিক জায়গায়, খালি মাঠ, নদীর তীর, পার্কিংয়ের জায়গাকে অস্থায়ী শ্মশান বানানো হয়। ছাইয়ের চাদরে ভয়ে যায় শ্মশানের মাটি। আর এবার সেই ছাই দিয়ে শ্মশানের ভেতরে তৈরি হচ্ছে পার্ক। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জি নিউজ জানিয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মৃতদেহের ছাই জড়ো করা হয়েছে ভোপালের বাধবাধা বিশ্রাম ঘাটে। ২১টি ট্রাক ভর্তি করে ছাই সংগ্রহ করা হয়েছে। সেই ছাই ফেলে পার্কের জমি মজবুত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রায় ১২ হাজার স্কয়ার ফুটের মধ্যে তৈরি হচ্ছে সেই পার্ক।

তবে হঠাৎ কেন করোনায় মৃতদের দেহভস্ম দিয়ে পার্ক তৈরির এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো? সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, করোনায় মৃত্যুর পর শ্মশানে পোড়ানো হাজার হাজার মৃতদেহের ছাই স্তুপাকার হয়ে শ্মশানে পড়ে রয়েছে। সেই ছাই কোথায় ফেলা হবে তা নিয়ে প্রথমে প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু যেখানেই ফেলা হোক না কেন, সেটা পরিবেশ দূষণের কারণ হয়ে উঠবে।

ভোপালের নর্মদা নদীতে ফেললে নদী দূষিত হবে। পাশাপাশি কোথাও জমা হয়ে গেলে পলির সৃষ্টি হবে। নদীর গতিপথ ব্যহত হতে পারে। তাই জাপানের মিয়াওয়াকি পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। 

ভোপালের শ্মশানঘাটের ম্যানেজমেন্ট কমিটির প্রধান মমতেশ শর্মা জানিয়েছেন, ছাই ফেলার পর তাতে গোবর, কাঠের গুড়ো, বালি মিশিয়ে মাটি তৈরি করা হবে। এরপর প্রায় ৪ হাজারের বেশি গাছ লাগানো হবে। এই সিদ্ধান্তের কথা শ্মশানে মৃতদেহ নিয়ে আসা পরিবারগুলোকে জানানো হয়েছে।

তিনি জানান, স্বজন হারানো ব্যক্তিরা নিজের পরিবারের সদস্যের নামে গাছ লাগাতে পারেন। ইচ্ছুক সদস্যরা পার্কে গাছের দেখভাল করতে পারবেন। এতে তাদের একটা অনুভূতিও জড়িয়ে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মমতেশ শর্মা আরও জানিয়েছেন, চলতি বছরের ১৫ মার্চ থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ৯০ দিনে কঠোরভাবে কোভিড বিধি মেনে ৬ হাজার মৃতদেহের অন্তিম সংস্কার করা হয়েছে। বেশিরভাগ পরিবারই মৃতের অস্থি সংগ্রহ করে নিয়ে গেলেও করোনার বিধিনিষিধের জেরে ছাইভস্ম নিয়ে যায়নি। যার কারণে ২১ ট্রাক ছাই জমা হয়ে যায়। নর্মদা নদীতেও এই ছাই ফেলা সম্ভব ছিল না, কারণ তা পরিবেশের পক্ষে যথেষ্ট ক্ষতিকর। তাই এই বিপুল পরিমাণে ছাই দিয়ে পার্ক তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তিনি জানান, জাপানের মিয়াওয়াকি পদ্ধতি অনুসরণ করে এই পার্কটি নির্মাণ করা হবে। এমন ভাবে এই পার্কটি তৈরি করা হচ্ছে, যাতে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার গাছ অনায়াসেই এখানে রোপণ করা যায়।

মমতেশ শর্মার দাবি, এই পদ্ধতিতে গাছগুলো ১৫ থেকে ১৮ মাসের মধ্যেই বড় হয়ে যাবে।

সূত্র: এনডিটিভি

টিএম