উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার উপকূলের কাছে ভূমধ্যসাগরে আবারও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী একটি নৌকা ডুবে অন্তত ২১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। সোমবার দেশটির নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। গত দু’দিনের মধ্যে তিউনিশিয়া উপকূলে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো নৌকাডুবির ঘটনা ঘটল।

তিউনিশিয়ার ন্যাশনাল গার্ডের কর্মকর্তা কর্নেল হুসেম জেবেলি বলেছেন, ‘রোববার উপকূলের স্যাক্স বন্দরের কাছে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী নৌকাটি ডুবে যায়। পরে উপকূলরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা সেখান থেকে ২১ জনের মরদেহ উদ্ধার করেন।’

কর্তৃপক্ষ বলছে, লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টার সময় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী নৌকাটি ডুবে যায়।

জেবেলি বলেছেন, তিউনিশিয়ার সীমান্ত নজরদারি প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে গত কয়েকদিনে উপকূলরক্ষী বাহিনী অভিবাসনপ্রত্যাশীদের  অন্তত ১০টি অবৈধ যাত্রা আটকে দিয়েছে। এই অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে ১৫৮ জনকে। 

সম্প্রতি তিউনিশিয়া উপকূলে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী বেশ কয়েকটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে ওই অঞ্চলের আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতির সুযোগে তিউনিশিয়া এবং লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পাড়ি জমানোর চেষ্টা বৃদ্ধি পেয়েছে।

এর আগে, গত শনিবার লিবিয়া থেকে যাত্রা শুরু করে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরের তিউনিশিয়া উপকূলে বাংলাদেশিসহ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী একটি নৌকা ডুবে যায়। এতে ৪৩ জনের প্রাণহানি ঘটে এবং নৌকার অন্য ৮৪ আরোহীকে উদ্ধার করে তিউনিশিয়ার নৌবাহিনী।

গত ২৪ জুন ভূমধ্যসাগর থেকে ভাসমান অবস্থায় ২৬৭ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করে তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড। এই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ২৬৪ জনই বাংলাদেশি। লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে অবৈধপথে ইউরোপে যাওয়ার সময় ওইদিন তাদের উদ্ধারের তথ্য জানায় আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। 

এর দু’দিন পর ২৭ জুন পথে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী একটি নৌকা ভূমধ্যসাগরে ভেঙে যায়। পরে তিউনিশিয়ার নৌবাহিনী ওই নৌকা থেকে ১৭৮ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করে। এ সময় নৌকাটিতে অন্য দুই অভিবাসনপ্রত্যাশীর মরদেহ পাওয়া যায়। নৌকাটি থেকে উদ্ধার অভিবাসনপ্রত্যাশীরা বাংলাদেশ, মিসর, ইরিত্রিয়া, আইভরিকোস্ট, মালি, নাইজেরিয়া, সিরিয়া এবং তিউনিসিয়ার নাগরিক বলে জানিয়েছিল তিউনিসিয়া কর্তৃপক্ষ।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমানোর অন্যতম পথ হয়ে উঠেছে লিবিয়া এবং ইতালি। তবে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ইতালি হয়ে ইউরোপ যাত্রার চেষ্টা প্রায়ই ব্যর্থ হয়।

চলতি বছরে ইতালি হয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ইউরোপ যাত্রার পরিমাণ আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, এ বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৯ হাজার ৮০০ অভিবাসনপ্রত্যাশী ইতালিতে পৌঁছেছেন; যাদের বেশিরভাগই সংঘাত এবং দারিদ্র থেকে বাঁচতে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ছেড়ে পালিয়েছেন। কিন্তু গত বছরের একই সময়ে ইতালিতে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পৌঁছানোর এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৬ হাজার ৭০০ বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শুধুমাত্র লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছেন ১১ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী; যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭০ শতাংশ বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটি বলছে, অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত কমপক্ষে ৭৬০ জন অভিবাসী মারা গেছেন। গত বছর এই সংখ্যা ছিল এক হাজার ৪০০ জন।

সূত্র: রয়টার্স, মিডল ইস্ট আই।

এসএস