ইরানের একটি পরমাণু কেন্দ্রে কাজ করছেন একজন গবেষক

ইরান অত্যাধুনিক ইউরেনিয়াম ধাতব বা ‘সিলিকন ফুয়েল প্লেট’ তৈরির কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। আর এরপরই দেশটির এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় পরাশক্তি দেশগুলো।

তবে সমালোচনা করলেও যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি ফের কার্যকরের বিষয়ে কূটনৈতিক পথ এখনও খোলা আছে।

আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) মঙ্গলবার জানিয়েছে, ২০ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাধ্যমে ধাতব বা ‘সিলিকন ফুয়েল প্লেট’ তৈরির কাজ শুরু করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে ইরান। এর মাধ্যমে পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরির আরও কাছাকাছি পৌঁছে যাবে দেশটি।

এরপরই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখ্রপাত্র নেড প্রাইস সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইতোপূর্বে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তিতে দেওয়া অঙ্গীকারগুলো না মেনে কার্যক্রম জোরদারের বিষয়ে ইরানের নেওয়া সিদ্ধান্ত উদ্বেগজনক। বিশেষ করে দেশটি যেসব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, সেগুলো পরমাণু অস্ত্র তৈরির গবেষণায় ব্যবহৃত হয়।’

তিরি আরও বলেন, ‘সর্বশেষ এই সিদ্ধান্তের কারণে পরমাণু চুক্তি থেকে ইরান আরও এক ধাপ পেছনে চলে গেল। বিশেষ করে চুক্তিতে ফেরার ব্যাপারে আমরা যখন আমাদের ইচ্ছা ও একাগ্রতা প্রদর্শন করেছি।’

এদিকে ইরানের এই নতুন সিদ্ধান্তে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় পরাশক্তি জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। এক যৌথ বিবৃতিতে দেশ তিনটি জানিয়েছে, পরমাণু চুক্তি ফের কার্যকরের বিষয়ে সফল ভিয়েনা আলোচনাকে হুমকির মুখে ফেলেছে ইরান।

যৌথ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘বেসামরিক উদ্দেশে অত্যাধুনিক ইউরেনিয়াম ধাতব বা ‘সিলিকন ফুয়েল প্লেট’ প্রয়োজন রয়েছে বলে ইরান দাবি করলেও এর কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই। এটি আসলে পরমাণু অস্ত্র তৈরির অন্যতম বড় পদক্ষেপ।’

২০১৫ সালে বিশ্বের ছয় পরাশক্তির সঙ্গে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করে ইরান। এর ফলে পামাণবিক বোমা প্রস্তুতের জন্য প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়াম মজুতের ক্ষেত্রে রাশ টানতে বাধ্য হয় রুহানির প্রশাসন। এছাড়া ইরান যাতে পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করে, সে দিকেও নজর রাখে জাতিসংঘ।

কিন্তু ২০১৮ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘একপেশে’, ‘এর কোনো ভবিষ্যৎ নেই’ অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলার ব্যাপারে ইরানও উদাসীন হয়ে পড়ে। তারপর থেকেই ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের তুমুল টানাপোড়েন শুরু হয়। এমনকি রাশিয়া থেকে সাহায্য পাওয়াও বন্ধ হয়ে যায় দেশটির।

চলতি বছরের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পরে ইরান হুমকি দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা না তুললে ইউরেনিয়ামের মজুত ফের বাড়ানো হবে। সে অনুযায়ী আগের চেয়ে ইউরেনিয়ামের মজুত কয়েক গুণ বাড়িয়েছে তেহরান। এছাড়া জাতিসংঘকেও পরমাণু কেন্দ্রের তথ্য দিচ্ছে না দেশটি।

ইরান অবশ্য বরাবরই দাবি করে আসছে যে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। তবে দেশটির সর্বশেষ এই সিদ্ধান্ত পরমাণু চুক্তি ফের কার্যকরের পথে কোনো বাধা সৃষ্টি করে কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়।

উল্লেখ্য, সিলিকন ফুয়েল হচ্ছে অত্যাধুনিক পরমাণু জ্বালানি যা উৎপাদনের প্রযুক্তি বিশ্বের হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি দেশ রপ্ত করেছে।

টিএম