বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম শ্বাসনালী সুয়েজ খালে জাহাজ চলাচল আটকে দেওয়া ‘এভার গিভেন’ অবশেষে ১০৬ দিন পর ওই জলপথ ছেড়েছে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এ বাণিজ্যিক জাহাজটি গত মার্চে সুয়েজ খালের দক্ষিণ প্রান্তে আটকে গিয়েছিল। ছয়দিন আটকে থাকার পর উদ্ধার হলেও ক্ষতিপূরণ নিয়ে মীমাংসা না হওয়ায় সেটি এতদিন সুয়েজ খালের তীরেই ছিল। দীর্ঘদিনের আলোচনা শেষে মিসর কর্তৃপক্ষ ও জাহাজ মালিকের মধ্যে ক্ষতিপূরণ চুক্তির পর বুধবার সেটি পুনরায় যাত্রা শুরু করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, বুধবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সুয়েজ খাল থেকে এভার গিভেনের যাত্রা শুরু হয়। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কন্টেইনারবাহী এই জাহাজ সুয়েজ খাল থেকে ভূমধ্যসাগরের উত্তর অভিমুখে চলতে শুরু করেছে।

সুয়েজ খালে আটকে পড়ার ছয়দিন পর গত ২৯ মার্চ এভার গিভেনকে ভাসায় উদ্ধারকারীরা। পরে সুয়েজ খালের তীরে মিসরের ইসমাইলিয়া শহরের কাছে তিন মাসের বেশি সময় ধরে নোঙ্গর করা ছিল এই জাহাজ।

গত রোববার (৪ জুলাই) তৃতীয় পক্ষের দায়বদ্ধতার জন্য এভার গিভেনের বীমাকারী কোম্পানি ‘ইউকে ক্লাব’ ঘোষণা দেয়, ক্ষতিপূরণ নিয়ে তাদের বিরোধ নিষ্পত্তি করতে সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষের (এসসিএ) সাথে একটি ‘আনুষ্ঠানিক সমাধান’ সই হয়েছে।

সাংবাদিকদের বহনকারী একটি টাগ বোটের ক্যাপ্টেন তারেক আলজেকি বলেছেন, প্রায় ছয় ঘণ্টার যাত্রা শেষে খালের উত্তরের পোর্ট সাঈদে পৌঁছাবে এভার গিভেন।

কী ধরনের চুক্তির বিনিময়ে এভার গিভেনকে মুক্তি দিয়েছে মিসর তা এখনো জানা যায়নি। তবে এর আগে এই জাহাজের মালিকের কাছে ৫৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিল মিসর।

১৯৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সুয়েজ খাল ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগরকে সংযুক্ত করেছে। এর ফলে ইউরোপ এবং এশিয়ার সমুদ্রপথের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়ে যায়। 

গত ২৩ মার্চ সরু, তবে বিশ্ব বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ এই শ্বাসনালীতে আটকে যায় ২ লাখ টনের জাহাজ ‘এমভি এভার গিভেন’। ফলে সেখানে ভয়াবহ অচলাবস্থা তৈরি হয়। সেই সময় অনেকগুলো ‘টাগ বোট’ ছাড়াও এভার গিভেনকে উদ্ধারে জাহাজের চারপাশে খননকাজও করা হয়। জাহাজটিকে উদ্ধার করতে গিয়ে একজন ব্যক্তি প্রাণও হারিয়েছিলেন। ছয়দিনের প্রচেষ্টায় জাহাজটি উদ্ধারের পর স্বাভাবিক হয় এই জলপথ।

২০১৮ সালে তৈরি পানামার পতাকাবাহী দৈত্যাকার এই জাহাজটির দৈর্ঘ্য ৪০০ মিটার। প্রায় সোয়া দুই লাখ টন ওজনের কনটেইনারবাহী জাহাজটি ১৮ হাজার ৩০০ কনটেইনার নিয়ে আটকা পড়েছিল সুয়েজে। ওই সময় মেরিটাইম ডাটা কোম্পানি লয়েডস লিস্ট বলেছিল, চারটি ফুটবল মাঠের চেয়ে দীর্ঘ এভার গিভেনের কারণে এশিয়া এবং ইউরোপের মাঝে দৈনিক ৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়।

জলপথে অচলাবস্থা তৈরি হওয়ায় মিসরও সেই সময় দিনে গড়ে ১২ থেকে ১৫ মিলিয়ন ডলারের রাজস্ব হারিয়েছে বলে জানায় সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষ।

এসএস/জেএস