জরুরি প্রয়োজনে চীনা সরকারের সাথে যোগাযোগের জন্য একটি ইমার্জেন্সি হটলাইন চালুর চিন্তা করছে যুক্তরাষ্ট্র। শীতল যুদ্ধ চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে যোগাযোগের জন্য চালু হওয়া ‘রেড টেলিফোনে’র আদলে চালু হতে পারে এ ইমার্জেন্সি হটলাইন। 

যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা ও বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল একজনের সূত্র দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য দিয়েছে সিএনএন। যদিও বিষয়টি এখনও একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। চীনা সরকারের কাছে বিষয়টি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরা হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাতের ঝুঁকি কমাতে এ পথে হাঁটতে চায় বাইডেন প্রশাসন।   

এ হটলাইন স্থাপন সম্ভব হলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অথবা তার জাতীয় নিরাপত্তা টিমের শীর্ষ কর্মকর্তারা যেকোনো সময় চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বা তার কাছাকাছি থাকা কাউকে এনক্রিপটেড বার্তা পাঠাতে পারবেন। উদাহরণস্বরুপ: হঠাৎ সেনা সদস্যদের বিষয়ে জরুরি কোনো বার্তা বা সাইবার হামলার বিষয়ে দুই দেশ তথ্য আদান-প্রদান করতে পারবে।   

চীনের সঙ্গে হটলাইন স্থাপনের এ উদ্যোগ নতুন নয়। মূলত ওবামা প্রশাসনের সময় প্রথম এ উদ্যোগ নেওয়া হয়, যদিও তা আলোর মুখে দেখেনি। 

বাইডেন প্রশাসন বিষয়টা নিয়ে আগ্রহী হলেও এ নিয়ে এখনও অনেক কাজ বাকি রয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আদৌ চীন এ ডিভাইস ব্যবহার করতে রাজি হবে কি না সেটাই নিশ্চিত  নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা বলছেন, জরুরি কোনো বিষয়ে চীনের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়াটা বরাবরই একটা মুশকিল।  

শুধুমাত্র সামরিক প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য চীনের সঙ্গে এমন একটি হটলাইন আগে থেকেই রয়েছে পেন্টাগনে। তবে তা ব্যবহার হওয়ার নজির নেই বললেই চলে।   

এ হটলাইনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা বলছেন, হ্যাঁ, আমাদের একটা হটলাইন আছে। এটা কেবল নামেই আছে। সামান্য যে কয়েকবার এটা আমরা ব্যবহার করেছি, দেখা গেছে ঘণ্টার পরে ঘণ্টা কেবল রিং বেজেই গেছে। 

যুক্তরাষ্ট্রে বলছে, চীনা সেনাবাহিনীর আক্রমণাত্মক মনোভাব দুই দেশের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হওয়ার সুযোগ বাড়িয়েছে।  এ জন্য তারা মনে করে, ভবিষ্যতে বড় ধরনের কোনো ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে এ বিষয়ে অনেক কাজ করতে হবে। 

আর এ বিষয়টাকে মাথায় রেখে যুক্তরাষ্ট্র মূলত চীনের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়টাকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। মনে করা হচ্ছে, যোগাযোগটা ভালো করতে পারলে কোনো সংকটজনক পরিস্থিতি ঠেকানো যাবে। 

চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা রয়েছে, এবং থাকবেও উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা বলছেন, আমরা চাই এ প্রতিযোগিতা থেকে যেন সংঘাত তৈরি না হয়। 

ডিভাইসটি কিভাবে কাজ করবে তা নিয়ে এখনও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল কাজ করছে। পুরো বিষয়টার একটা সম্যক ধারণা তৈরির পর বাইডেন প্রশাসনের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু হবে। ব্যবহারের আগে চূড়ান্ত ধাপে হোয়াইট হাউস ও চীনা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এর অনুমোদন আসতে হবে। 

শীতল যুদ্ধ চলাকালে ‘লাল টেলিফোন’ যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল বলে মনে করা হলেও বর্তমান সময়ে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়- ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ না করতে এ হটলাইনের মাধ্যমে রাশিয়াকে সতর্ক করেছিল ওবামা প্রশাসন, কিন্তু তা আমলে নেয়নি রাশিয়া। 
 
এখন চীনের সঙ্গে যে হটলাইন স্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, তার কার্যকারিতা নির্ভর করবে এটা ব্যবহারে বেইজিংয়ের সদিচ্ছা এবং ডিভাইসটি এমন এক জায়গায় বসানো যাতে প্রেসিডেন্ট জিনপিংকে এর মাধ্যমে যেকোনো সময় পাওয়া যায়, তার ওপর।  

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য আরও কয়েকটি দেশ জরুরি কোনো বিষয়ে সঠিক সময়ে চীনের কাছ থেকে কোনো সাড়া পায়নি। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, গতবছরও কোভিড-১৯ নিয়ে চীনের কাছ থেকে কোনো তথ্য পেতে বেগ পেতে হয়েছে।  

বেইজিংয়ে কাজ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এমন একজন কর্মকর্তা বলছেন, কঠিন কোনো সময়ে চীনের কাছ থেকে তথ্য পাওয়াটা আরও কঠিন হয়ে যায়। এটার কারণ হলো তারা যে সিস্টেমে চলে তা হলো শীর্ষ ব্যক্তির কাছে পৌঁছানো যায় সবার শেষে। কোভিড মহামারি শুরুর প্রথম দিকে তাদের কাছ থেকে বহু প্রশ্নের জবাব আমরা পাচ্ছিলাম না।  

২০১৪ সালে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি দক্ষিণ চীন সাগরের বিরোধপূর্ণ এলাকায় একটি জাহাজ পাঠিয়েছিল। কিন্তু এ নিয়ে ভিয়েতনাম যখন তাদের সঙ্গে আলোচনার কথা জানায় চীন কোনো সাড়া দিয়েছিল না তাতে।  

হোয়াইট হাউস ও বেইজিংকে সংযুক্ত করার কথা বহুদিন ধরেই আলোচনায় থাকলেও তার বাস্তবায়ন সবসময় কঠিনই থেকে গেছে।   

চীনের তরফ থেকে বিষয়টা নিয়ে বিশ্বাসের ঘাটতি রয়েছে বলেও মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি মনে করে, তবে সময় গেছে অনেক, চীন হয়তো এখন বুঝবে এটা কোনো সিলভার বুলেট না।  

সূত্র : সিএনএন। 

এনএফ