দোভাষী ও পরিবারের সদস্যসহ দুই শতাধিক আফগান যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছে
মার্কিন সামরিক বাহিনীর সঙ্গে থাকা একজন আফগান দোভাষী দেশটির এক গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলছেন
আফগান দোভাষী ও তাদের পরিবারের সদস্যসহ আফগানিস্তানের দুই শতাধিক নাগরিককে বহনকারী একটি বিমান যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছে। তারা সবাই আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক বাহিনীর পক্ষে কাজ করেছিলেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার (৩০ জুলাই) ভোররাতে ওয়াশিংটন ডালাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তারা।
মার্কিন সরকারের একটি আভ্যন্তরীণ নথি ও বাণিজ্যিক ফ্লাইট ট্র্যাকিং সার্ভিসের বরাত দিয়ে শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা ও বার্তাসংস্থা এপি।
বিজ্ঞাপন
মার্কিন সরকারের এ সংক্রান্ত একটি নথি হাতে পেয়েছে এপি। ওই নথিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানো ওই বিমানটিতে মোট ২২১ জন আফগান নাগরিক রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫৭ জন অল্পবয়সী শিশু ছাড়াও রয়েছে ১৫ জন সদ্যোজাত শিশু। এছাড়া বাণিজ্যিক ফ্লাইট ট্র্যাকিং সার্ভিস ফ্লাইটঅ্যাওয়ার জানিয়েছে, শুক্রবার ভোরে ওই বিমানটি ওয়াশিংটনের ডালাস এয়ারপোর্টে অবতরণ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার পর থেকে তালেবানগোষ্ঠীর দৌরাত্ম্য দিন দিন বাড়তে থাকায় এতদিন যেসব আফগান নাগরিক মার্কিন বাহিনীর দোভাষী হিসেবে কাজ করেছেন, তাদের জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। পাশাপাশি, গত কয়েকদিনে তালেবান যোদ্ধারা দেশের বেশ কিছু এলাকা নিজেদের দখলে আনতে সক্ষম হওয়ায় এই ঝুঁকি আরও গুরুতর রূপ নিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এসব আফগান দোভাষী ও তাদের পরিবারের সদস্যদেরকে বিশেষ অভিবাসন ভিসা (এসআইভি)-র মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে তাদেরকে ওয়াশিংটন ডিসির কাছেই অবস্থিত ভার্জিনিয়ার ফোর্ট লি সামরিক ঘাঁটিতে থাকতে দেওয়া হবে। সেখানেই তাদের অভিবাসন সংক্রান্ত বিস্তারিত কাজ সম্পন্ন করা হবে।
২০০১ সাল থেকে আফগানিস্তান যুদ্ধে যে সকল আফগান নাগরিক মার্কিন বাহিনীকে সহায়তা করেছেন বা পক্ষে কাজ করেছেন মূলত তাদেরকেই পরিবারসহ এই ভিসা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
এর আগে মার্কিন সরকার জানিয়েছিল যে, তালেবানের হুমকির মুখে থাকা প্রায় ৭৫০ জন আফগান নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্রে সরিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় অনুমোদন ইতোমধ্যেই দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রক্রিয়া যাচাইয়ের পর তাদেরকে অনুমোদন দেওয়া হয়। নিজেদের পরিবারের প্রায় ১ হাজার ৭৫০ জন সদস্যসহ তারা যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন।
এর আগে চলতি জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, তারা প্রত্যেকেই সাহসী মানুষ। আমরা তাদের নিশ্চিত করতে চাই যে, গত দু’দশক ধরে তারা আফগানিস্তান অভিযানে যে ভূমিকা পালন করেছেন, আমাদের কাছে তার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা সেসময় নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে জানিয়েছিলেন, উগ্র ইসলামপন্থি গোষ্ঠী তালেবানের আক্রোশ থেকে তাদের রক্ষা করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বিশেষ অভিবাসী ভিসার আওতায় তাদেরকে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সরিয়ে আনা হবে। তারপর তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে মার্কিন সেনাবাহিনী ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব সামরিক ঘাঁটি রয়েছে, সেখানে নিয়োগ দেওয়া হবে।
ওই কর্মকর্তা সেসময় আরও জানিয়েছিলেন, জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে ২ হাজার ৫০০ দোভাষীকে সরিয়ে আনা হবে, পরে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।
টিএম