ভারতের পার্লামেন্ট অধিবেশনে হট্টগোলের দৃশ্য

ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপের তৈরি করা স্পাইওয়্যার পেগাসাস ইস্যুতে উত্তাল ভারতের পার্লামেন্ট। বাদল অধিবেশনে প্রতিদিনই সরকার ও বিরোধী পক্ষের হৈ-হট্টগোলের কারণে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মুলতবি হয়ে যাচ্ছে পার্লামেন্টের দুই কক্ষের অধিবেশন। আর তার ফলে ক্ষতির পরিমাণ গিয়ে পৌঁছেছে প্রায় ১৩৩ কোটি রুপিতে। শনিবার (৩১ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গত ১৯ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ভারতীয় পার্লামেন্টের বাদল অধিবেশন চলার কথা ছিল মোট ১০৭ ঘণ্টা, তার পরিবর্তে চলেছে মাত্র ১৮ ঘণ্টা! আর সেই কারণেই নষ্ট হয়েছে বিপুল পরিমাণ এই অর্থ।

ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারের দাবি, লোকসভায় কাজের সময় নির্ধারিত ছিল ৫৪ ঘণ্টা, কিন্তু তা হয়েছে মাত্র ৭ ঘণ্টা। অন্যদিকে, রাজ্যসভায় কাজের সময় নির্ধারিত ছিল ৫৩ ঘণ্টা। কিন্তু এখানেও কাজ হয়েছে মাত্র ১১ ঘণ্টা। মোট ১০৭ ঘণ্টার মধ্যে পার্লামেন্ট অধিবেশন চলেছে মাত্র ১৮ ঘণ্টা। অর্থাৎ ৮৯ ঘণ্টা সময়ই নষ্ট হয়েছে। আর এর কারণেই দেশের করদাতাদের ১৩৩ কোটি রুপির ক্ষতি হয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, গত ১৯ জুলাই পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরুর আগের দিন পেগাসাসের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। আর তাই বাদল অধিবেশনের প্রথম দিন থেকেই আড়িপাতা ইস্যুতে সরব ছিল পার্লামেন্টের বিরোধী সদস্যরা।

তাদের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান বা অবসরপ্রাপ্ত কোনো বিচারপতির নেতৃত্বে আড়িপাতা অভিযোগের তদন্ত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে এই ইস্যুতে পার্লামেন্টে বক্তব্য রাখতে হবে।

কিন্তু মোদি সরকার শুরু থেকেই এটিকে ‘নন-ইস্যু’ হিসেবে আখ্যায়িত করতে শুরু করে। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের স্পষ্ট দাবি, কেন্দ্রীয় তথ্য-প্রযুক্তিমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব পেগাসাস নিয়ে যে বক্তব্য পার্লামেন্টে রেখেছেন, সেটাই যথেষ্ট। কিন্তু বিরোধীরাও এট না মেনে নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকলে পার্লামেন্টের অধিবেশনে সৃষ্টি হয় অচলাবস্থার।

অবশ্য ‘সংসদ চলতে না দেওয়ার’ অভিযোগ এনে কয়েকদিন আগেই দেশটির বিরোধী দল কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। তার অভিযোগ, কংগ্রেস ইচ্ছাকৃত ভাবে সংসদে অচলাবস্থা তৈরি করছে। ফলে যে সব বিষয়ে আলোচনার প্রয়োজন তা থমকে যাচ্ছে।

শনিবার রাজ্যসভার সচিবালয় থেকে জানানো হয়, অধিবেশন শুরুর আগে, সর্বদলীয় বৈঠকে সরকার এবং সব দলের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে কাজের বিষয়ে আলোচনার অনুরোধ জানিয়েছিলেন চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডু। কিন্তু সে অনুরোধ যে কোনো গুরুত্ব পায়নি, অধিবেশনের প্রথম দু’সপ্তাহেই তা স্পষ্ট।

তবে সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, পেগাসাস, কৃষি আইনসহ একাধিক বিষয়ে পার্লামেন্টে বিরোধীদের লাগাতার আক্রমণের মুখে পড়তে হচ্ছে ক্ষমতাসীন মোদি সরকারকে। আর এই সুযোগে এসব বিষয়ে সরকারের কাছে জবাবদিহি চেয়ে আক্রমণ আরও জোরালো করেছে বিরোধীরা। এমন পরিস্থিতিতে আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি সামনে নিয়ে এসে মোদি সরকার চাপ মোকাবিলার পাল্টা কৌশল নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

টিএম