করোনা টিকা কোভ্যাক্সিনের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে বাংলাদেশে এর মেডিকেল ট্রায়াল পরিচালনা করতে চায় ভারত। বাংলাদেশের চিকিৎসা গবেষণা সংস্থা বিএমআরসি (বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল) সেই ট্রায়ালের অনুমতিও ইতোমধ্যে দিয়েছে।

সামনে আর কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হতে পারে সেই ট্রায়াল। সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতের জাতীয় দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমস।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকরের অভ্যন্তরীণ একটি নথির অনুলিপি হিন্দুস্তান টাইমসের হাতে এসেছে। সেই নথিতে বলা হয়েছে, ‘বিদেশে, বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশসমূহে কোভ্যাক্সিনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে বাংলাদেশে এই টিকার ট্রায়ালের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।’

‘ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের জৈবপ্রযুক্তি বিভাগ এবং ভারত বায়োটেকের কর্মকর্তারা যেন বাংলাদেশে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের কথা বলতে পারেন, সেই বিষয়ক পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশে ট্রায়াল করানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ বিষয়ক অনুমোদনও দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিলেই ট্রায়াল শুরু হবে।'

এদিকে, বাংলাদেশের সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সূত্র হিন্দুস্তান টাইমসকে নিশ্চিত করেছে, ইতোমধ্যে এই ট্রায়াল পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে বিএমআরসি।

সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও বিএমআরসির বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দ মোদাসসের আলী গত ১৮ জুলাই ট্রায়ালের অনুমোদনপত্রে স্বাক্ষর করেছেন।

করোনা মোকাবিলায় ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তি ও উদ্যোগে তৈরি প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র টিকা কোভ্যাক্সিন। ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যভিত্তিক ওষুধ ও টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেক এই টিকার উদ্ভাবক।

২৪ বছরের পুরোনো প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেক কোভ্যাক্সিন ছাড়াও এ পর্যন্ত ১৬টি টিকা প্রস্তুত করেছে এবং ১২৩টি দেশে সেসব টিকা রফতানি হয়।

চলতি বছর ৩ জানুয়ারি জরুরি প্রয়োজনে এই টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই)।

২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারি থেকে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এই কর্মসূচিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে করোনা টিকা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভারতীয় সংস্করণ কোভিশিল্ড এবং ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ফর্মুলায় কোভিশিল্ডের প্রস্তুতকারী কোম্পানি হলো ভারতীয় টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট, যা বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।

ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন টিকার মূল উপাদান মৃত বা নিষ্ক্রিয় করোনাভাইরাস, যা নিরাপদে মানবদেহে প্রবেশ করানো যায়। ভারত বায়োটেককে মৃত করোনাভাইরাসের নমুনা সরবরাহ করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি।

গত জুলাইয়ের প্রথম দিকে কোভ্যাক্সিনের চুড়ান্ত মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভারত বায়োটেক। সেখানে দেখা যায়, কোভ্যাক্সিনের দুই ডোজ মানবদেহে করোনা বা এ জাতীয় উপসর্গজনিত অসুখের বিরুদ্ধে সার্বিকভাবে ৭৭ দশমিক ৮ শতাংশ প্রতিরোধী শক্তি গড়তে সক্ষম।

ভারত ছাড়াও ব্রাজিল, ফিলিপাইন, ইরান, মেক্সিকোসহ ১৬ টি দেশে অনুমোদন পেয়েছে কোভ্যাক্সিন। তাছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার বিষয়ক ছাড়পত্র পাওয়ার জন্যও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত বায়োটেক।

তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কোভ্যাক্সিনের কোনো ডোজ আসেনি। চলতি বছর জানুয়ারিতে বাংলাদেশে কোভ্যাক্সিনের ট্রায়াল চালানোর অনুমতি চেয়েছিল ভারত বায়োটেক। তবে বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে সে সময় এই আবেদনের পক্ষে ইতিবাচক বা নেতিবাচক- কোনো উত্তর দেওয়া হয়নি।

সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস

এসএমডব্লিউ