পশ্চিমা বিশ্ব যদি কোভিড টিকা অন্য দেশগুলোকে দেওয়ার পরিবর্তে তাদের নিজ নিজ দেশের মানুষদের জন্য বুস্টার ডোজকেই অগ্রাধিকার দিয়ে ‘বাকি বিশ্বের প্রতি তাদের দায়িত্ব অগ্রাহ্য করে’ তাহলে বিশ্বজুড়ে আরও অনেক মানুষের মৃত্যু হবে করোনায়।

ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানে লেখা নিবন্ধে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপের প্রধান অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড এবং বৈশ্বিক টিকা জোট গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমুনাইজেশন বা গ্যাভির প্রধান নির্বাহী সেথ বার্কলি এভাবেই সতর্ক করেছেন। 

তারা বলছেন যে, মহামারির প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে গোটা বিশ্বজুড়ে কোভিড টিকাদান কর্মসূচির জন্য বৈজ্ঞানিক ও জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে এর সুদূরপ্রসারী পরিণতি দেখা দিতে পারে।

তারা লিখেছেন, ‌‘নীতি নির্ধারক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের জন্য এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। ধনী দেশে যখন বড় পরিসরে বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে, তখন বাকি বিশ্বজুড়ে এই বার্তা চলে যাবে যে তাহলে বিশ্বের সর্বত্র হয়তো টিকার বুস্টার ডোজ প্রয়োজন।’

‘এতে করে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতির বাইরে অনেক টিকার ডোজ প্রয়োজন পড়বে। ফলে যেটা হবে, যারা এখনো টিকার এক ডোজ পাননি তাদের মধ্যে অনেকে মারা যাবেন; যা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনার লাগাম টানার ক্ষেত্রে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে।’

‘যদি বৈজ্ঞানিক ভিত্তির কথা চিন্তা না করে লাখ লাখ মানুষকে এভাবে বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়, তাহলে ইতিহাস আমাদের এই সময়কে এভাবে স্মরণ করবে, যখন রাজনৈতিক নেতারা বড় সংকটে বাকি বিশ্বের প্রতি তাদের দায়িত্ব অগ্রাহ্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।’

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইসরায়েলের মতো আরও কিছু ধনী দেশ তাদের মোট জনসংখ্যার অধিকাংশকেই টিকা দেওয়ার পর এখন বুস্টার অর্থাৎ টিকার তৃতীয় ডোজ দেওয়া শুরুর করার মধ্যে টিকা বিশেষজ্ঞরা এমন সতর্কবার্তা উচ্চারণ করলেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ধনী দেশগুলো যদি অন্তত সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত তাদের নাগরিকদের বুস্টার ডোজ দেওয়া বন্ধ করে তাহলে ধনী ও দরিদ্র দেশের মধ্যে টিকা পাওয়া নিয়ে যে মারাত্মক বৈষম্য তৈরি হয়েছে তা কিছুটা হলেও দূর করতে সহায়ক হবে।

কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বের উন্নত ও ধনী রাষ্ট্র বলে পরিচিত দেশগুলো অবশ্য জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক অঙ্গসংস্থাটির এমন আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে বুস্টার ডোজ দেওয়া অব্যাহত রেখেছে। খোদ যুক্তরাষ্ট্র ডব্লিউএইচও’র এমন আহ্বানকে ‘ভুল পছন্দ’ বলে বর্ণনা করেছে।

অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড ও গ্যাভির সেথ বার্কলি বলছেন, ‘চলতি বছরে করোনায় যেসব মানুষের মৃত্যু হবে আমরা যদি সঠিক সিদ্ধান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম তাহলে তাদের অধিকাংশের মৃত্যু ঠেকানো যেত। সবার স্বার্থেই ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের টিকা দিতে হবে।’

‘এতে করে বিশ্বে প্রকোপ ছড়ানো করোনার নতুন ধরনের ঝুঁকি হ্রাস পাবে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর চাপ কমবে। উন্মুক্তভাবে ভ্রমণ, বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত এবং এই ধরনের নৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রস্তুত রাজনীতিবিদদের আন্তর্জাতিক কর্তৃত্ব বাড়াবে।’

এএস