মার্কিন সেনাসহ সকল বিদেশি সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার মধ্যেই আফগানিস্তানজুড়ে সরকারি বাহিনী ও তালেবান যোদ্ধাদের মধ্যে যুদ্ধের তীব্রতা আরও বেড়েছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা দখলে নিচ্ছে তালেবান। এই পরিস্থিতিতে আফগান রাজধানী কাবুলে উদ্বেগ বাড়ছে। তালেবানের হামলার আশঙ্কায় শহরজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্কের।

রোববার (১৫ আগস্ট) ভোরে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় নানগারহার প্রদেশের রাজধানী শহর জালালাবাদ দখলে নিয়েছে সশস্ত্র তালেবান যোদ্ধারা। আফগানিস্তানের পঞ্চম বৃহত্তম এই শহরটি রাজধানী কাবুল থেকে মাত্র ৮০ মাইল পূর্বে অবস্থিত। আফগানিস্তানের বড় শহরগুলোর মধ্যে একমাত্র কাবুলই এখন তালেবানের দখলে যেতে বাকি আছে।

এর আগে শনিবার চতুর্থ বৃহত্তম আফগান শহর মাজার-ই-শরীফ দখলে নেয় তালেবান। বিবিসি জানিয়েছে, মাজার-ই-শরীফ শহরটি ঐতিহ্যগতভাবেই তালেবান-বিরোধী শহর হিসেবে পরিচিত। মার্কিন সেনাসহ বিদেশি সেনাদের প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার মধ্যে দ্রুতগতিতে শহরটি দখলে নেওয়াকে তালেবানের জন্য বড় ধরনের বিজয় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

বিবিসি বলছে, তালেবানের হামলার মুখে আফগান সরকারি বাহিনী ভেঙে পড়ায় দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির ওপর পদত্যাগের চাপ বেড়েছে। এখন তিনি এমন এক পরিস্থিতিতে আছেন যেখান থেকে হয় পদত্যাগ অথবা রাজধানীর দখল রাখতে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মতো যেকোনো একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এদিকে কাবুলের আমেরিকান দূতাবাস থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার কাজে সহায়তা করতে আফগানিস্তানে ৫ হাজার সেনা পাঠানোর কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি জানিয়েছে, বিশেষ বিমানের মাধ্যমে ‘উল্লেখযোগ্য সংখ্যক’ দূতাবাসকর্মীকে ফিরিয়ে আনতে কাবুল বিমানবন্দরে সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে।

বিবিসি জানিয়েছে, আফগানিস্তানে সহিংসতার কারণে নতুন করে আরও আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অনেকে নিরাপত্তার আশায় বাড়ি-ঘর ছেড়ে রাজধানী কাবুলে পালিয়ে গেছেন।

এছাড়া দখলকৃত এলাকায় নারীদেরকে জোরপূর্বক বোরকা পরিধানে বাধ্য করছে তালেবান যোদ্ধারা। এর পাশাপাশি সামাজিক নিয়মকানুন ভঙ্গের অভিযোগে তালেবান যোদ্ধারা সাধারণ মানুষকে মারধরসহ নির্যাতন করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের একেবারে কাছাকাছি এলাকায় চলে এসেছে দেশটির বিদ্রোহীগোষ্ঠী তালেবানের সদস্যরা। শনিবার কাবুলের আশপাশের এলাকায় ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে এই বিদ্রোহীগোষ্ঠী। তাদের নিরবচ্ছিন্ন অভিযানের মুখে রাজধানী অভিমুখে বেসামরিক নাগরিকদের ঢল শুরু হয়েছে।

দেশটির দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বৃহত্তম শহরগুলো তালেবানের হাতে পতন হওয়ায় এখন রাজধানী কাবুল কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াইরত সরকারি বাহিনীর সদস্যরা কোনও ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি।

স্থানীয় একজন আইনপ্রণেতা শনিবার মার্কিন বার্তাসংস্থা এপিকে বলেছেন, বর্তমানে রাজধানী কাবুল থেকে মাত্র ১১ কিলোমিটার দক্ষিণের চার আসিয়াব জেলায় পৌঁছে গেছে তালেবান যোদ্ধারা।

এদিকে ৩০ দিনের মধ্যে তালেবান যোদ্ধারা আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখলে নিতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা আগে যে অনুমান করেছিলেন; সেটি কার্যত ভুল প্রমাণিত হতে চলেছে। মার্কিন নিরাপত্তা সূত্র বলছে, মার্কিন গোয়েন্দাদের ধারণার আগেই কাবুলের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে যাওয়ার হুমকি রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৬ আগস্ট শুক্রবার থেকে তালেবান যোদ্ধারা আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের অন্তত ২১টির রাজধানী নিজেদের দখলে নিয়েছে।

  প্রদেশ রাজধানী
তাখার  তালোকান
কুন্দুজ কুন্দুজ 
সার-ই-পাল সার-ই-পাল
সামানগান আইবাক
জাওজান শেবেরগান
বাগলান  পুল-ই-খুমরি
ফারাহ  ফারাহ
নিমরোজ জারাঞ্জ
বাদাখশান ফয়জাবাদ
১০ গজনি গজনি
১১ হেরাত হেরাত
১২ কান্দাহার কান্দাহার
১৩ হেলমান্দ লস্কর গাহ
১৪  উরুজগান টেরেনকোট
১৫ লোগার পুল-ই-আলম
১৬ ঘোর ফিরুজ কোহ
১৭ বাদঘিস কালা-ই নাও
১৮ পাকতিয়া গারদেজ
১৯ কুনার আসাদাবাদ
২০ বালখ মাজার-ই-শরীফ
২১ নানগারহার জালালাবাদ

টিএম