কেউই চায় না আফগানিস্তান সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর হোক : বরিস জনসন
তালেবান অভিযানের সাফল্যের জেরে আফগানিস্তানে ইতোমধ্যে ক্ষমতার পট পরিবর্তন হয়েছে, নতুন সরকার গঠনও সময়ের ব্যাপার মাত্র; কিন্তু নতুন সরকার আগমনের ফলে দেশটি সন্ত্রাসবাদের উৎপত্তিস্থল হয়ে উঠবে কি না- তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
রোববার সন্ধ্যায় বিশেষ কমিটি কোবরার বৈঠক শেষে এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাবুলে একটি নতুন শাসনামল আসার পদধ্বনি আমরা শুনতে পাচ্ছি এবং আমরা এখন পর্যন্ত জানি না, সেই নতুন শাসনামল কেমন হবে। তবে কেউই চায় না, আফগানিস্তান আবার সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘরে রূপান্তরিত হোক।’
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাজ্যের জরুরি অবস্থা বিষয়ক কমিটির নাম কোবরা। মন্ত্রিসভার সদস্য, সরকারি প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা, সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এই কমিটির সদস্য। আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিরে জেরে স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যায় এই বৈঠক আহ্বান করেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে একই দিন, রোববার কাবুলে প্রবেশ করেছে তালেবান বাহিনী; আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি পদত্যাগ করেছেন এবং দেশটিতে একটি অন্তবর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তালেবান নেতারা প্রত্যাশা করছেন, অল্প কয়দিনের মধ্যেই ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হবে।
বিজ্ঞাপন
এখন যে প্রশ্নটি বড় হয়ে সামনে এসেছে, তা হলো- তালেবানগোষ্ঠী সরকারগঠন করলে সেই সরকারকে স্বীকৃতি দেবে কোন কোন দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন ও হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি কিছুদিন আগেই জানিয়েছেন, ক্ষমতা দখল করতে গিয়ে তালেবানগোষ্ঠী যে পরিমাণ নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছে, তাতে তারা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে না।
ইতোমধ্যে জার্মানি, ভারত, কাতার ও তুরস্ক জানিয়েছে, আফগানিস্তানে যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করবে, তাদের স্বীকৃতি দেবে না এই দেশগুলো।
এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের অবস্থান প্রসঙ্গে বরিস জনসন বলেন, ‘যত সময় যাচ্ছে, দেশটির পরিস্থিতি উত্তরোত্তোর কঠিন হচ্ছে, এবং আমি মনে করি, আফগানিস্তানে আসন্ন নতুন সরকারের সঙ্গে সন্ত্রাস প্রতিরোধ বিষয়ক কোনো প্রকার চুক্তি সম্পাদন ছাড়া তাদের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত নয়।’
আফগানিস্তান যেন সন্ত্রাসবাদের দিকে ফিরে যেতে না পারে, সেজন্য ইতোমধ্যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও আন্তর্জাতিক সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যরাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে যুক্তরাজ্য কাজ করে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি, তিনি স্বীকার করেছেন- দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার আফগানিস্তানে তালেবানগোষ্ঠীকে নতুন গতি দিয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত স্বাভাবিক ছিল উল্লেখ করে বরিস জনসন বলেন, ‘এটি (যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার) কোনো অপ্রত্যাশিত ব্যাপার ছিল না। আমরা সবাই আগে থেকেই জানতাম যে কোনো দিন এমন ঘোষণা আসতে পারে।’
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দফতর ডাউনিং স্ট্রিট থেকে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে ইতোমধ্যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তর উপকূলীয় দেশসমূহের সামরিক জোট ন্যাটোর জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আফগানিস্তান বসবাসরত ৪ হাজারেরও বেশি ব্রিটিশ নাগরিককে ফিরিয়ে আনা হবে। ইতোমধ্যে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের নিরাপত্তায় ইতোমধ্যে ৬০০ ব্রিটিশ সৈন্য আফগানিস্তানে পাঠানো হয়েছে।
বরিস জনসন বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা আফগানিস্তান থেকে ব্রিটিশ নাগরিকদের ফিরিয়ে আনা ও বর্তমানে যেসব নাগরিক সেখানে অবস্থান করছেন তাদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।’
‘প্রতি মুহূর্তেই সেখানকার পরিস্থিতি আরও বেশি উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে এবং যেসব ব্রিটিশ নাগরিক দেশে ফিরে আসতে চান, তাদেরকে ফিরিয়ে আনতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
সূত্র : বিবিসি
এসএমডব্লিউ