রাজধানী দখলে নেওয়ার দু’দিন পর তালেবানের সশস্ত্র সদস্যরা আফগানিস্তানে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মানুষকে কাজে ফেরার আহ্বান জানাচ্ছে। দেশের ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে চায় বলে তালেবান ঘোষণা দেওয়ার একদিন পর বুধবার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তালেবানের ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত বাসিন্দাদের বাড়িতে গিয়ে কাজে ফেরার এই আহ্বান জানানো হয়।

তালেবান এবং মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক বাহিনীর ২০ বছরের যুদ্ধের সময় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের পর বিদেশিরা চলে যাওয়ার কারণে স্থানীয়দের উপার্জনের ওপর প্রভাব পড়েছে। মুদ্রাস্ফীতি এবং ডলারের অভাবে দেশটির অর্থনৈতিক সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে।

কাবুল দখলে নেওয়ার একদিন পর মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলনে এসে তালেবান ‌‘শান্তি, সমৃদ্ধি এবং আগের শাসনের সময় নারীদের কর্মক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার’ মতো বিধি থেকে বেরিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু দেশটির অনেক নাগরিক তালেবানের এই আশ্বাসে ভরসা রাখতে পারছেন না; তারা কট্টর ইসলামি এই গোষ্ঠীর আবারও ক্ষমতায় ফেরা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাত শহরের বাসিন্দা ৩৮ বছর বয়সী ওয়াসিমা বলেন, বুধবার সকালের দিকে তালেবানের তিনজন সশস্ত্র সদস্য বাড়িতে আসায় তিনি হতচকিত হয়ে যান। এ সময় তারা একটি দাতব্য সংস্থায় তার চাকরি, বেতন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান এবং পুনরায় কাজে ফেরার নির্দেশ দেন।

অন্তত এক ডজন আফগান বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী কাবুল থেকে দক্ষিণের লস্কর গা এবং উত্তরের মাজার-ই-শরিফে তালেবান অঘোষিত সফর করেছে। শাস্তির আশঙ্কায় ওই আফগানরা তাদের পুরো নাম জানাতে অস্বীকার করেছেন।
 
অনেকে বলেছেন, কাজে ফেরার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি তালেবানের নতুন নেতৃত্ব সম্পর্কে মানুষকে ভয় দেখানোর জন্যও এই সফর হয়ে থাকতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন। তবে এই সফরের ব্যাপারে তালেবানের একজন মুখপাত্রের মন্তব্য জানার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

ঝটিকা অভিযানের মাধ্যমে একের পর এক প্রদেশ দখল শেষে গত রোববার রাজধানী কাবুল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর থেকে সেখানকার অনেক ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান এখনও বন্ধ আছে। শহরের বেশিরভাগ এলাকা এখন জনমানবশূন্য।

কাবুলের বাসিন্দারা বলেছেন, জনবহুল এই রাজধানীতে সাধারণত যানবাহনের চাপ থাকলেও এখন মানুষের ভিড় বিমানবন্দরে; যেখানে কূটনীতিকদের বিমানে করে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন মানুষ। বুধবার কাবুলের বিমানবন্দরে মানুষের অতিরিক্ত চাপের কারণে পদদলিত হয়ে অন্তত ১৭ জন আহত হয়েছেন এবং তালেবান বলেছে, জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে তারা ফাঁকা গুলি ছুড়েছে।

মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, এই সঙ্কট থেকে উত্তরণ এবং অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায় তালেবান।

কিন্তু তালেবানের ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের শাসনের সময় নারীদের চাকরি এবং স্কুলে পড়াশোনার অনুমতি ছিল না। এমনকি ব্যভিচারের অপরাধে পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা হতো। যে কারণে এবারে তালেবান শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেশ শাসনের অঙ্গীকার করলেও অনেকে সন্দেহ পোষণ করছেন।

দেশটির সরকারি মালিকানাধীন ‘রেডিও টেলিভিশন আফগানিস্তানে’ উপস্থাপিকা হিসেবে কাজ করতেন শবনম দাওরান। বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, তাকে রেডিও টেলিভিশন আফগানিস্তানের চাকরি থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, তারা আমাকে বলেছেন যে, শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তন হয়েছে। এখানে আপনার প্রবেশের অনুমতি নেই। বাড়ি ফিরে যান।’ তবে এই ঘটনার জন্য তালেবান এবং রেডিও টেলিভিশন আফগানিস্তান কর্তৃপক্ষের মন্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।

দুই কন্যাকে নিয়ে মঙ্গলবার তালেবানের সংবাদ সম্মেলন দেখছিলেন শবনম দাওরান। তিনি বলেন, এখন তাকে কাজে ফেরার আহ্বান জানানো হলেও তালেবানের শাসনে নারীদের সুযোগ-সুবিধা সংকুচিত করা হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।

‘তালেবান বলেছে, নারীদের কাজ করা উচিত। কিন্তু আমি জানি নারীদের সুযোগ সংকুচিত করা হবে।’

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস